২১০০ সালের পূর্বাভাস

বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে প্রায় ৮ কোটি: গবেষণা

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০ | ১২:০৭ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে প্রায় ৮ কোটি: গবেষণা

২১০০ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম জনবহুল দেশ! ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৬৯ লাখ। ২১০০ সালে এই সংখ্যা কমে ৮ কোটি ১৩ লাখে পৌঁছাতে পারে। অবশ্য ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলে তা আরও কমে হবে ৭ কোটি ৪১ লাখ। ২০৩৯ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। ওই সময় মোট জনসংখ্যা হতে পারে প্রায় ১৭ কোটি ৩৪ লাখ।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, ১৯৫০ সালে একজন নারী তাঁর জীবদ্দশায় গড়ে ৪ দশমিক ৭টি সন্তানের জন্ম দিতেন, ২০১৭ সালে তা ২ দশমিক ৪-এ নেমে এসেছে। মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত এ গবেষণা অনুযায়ী, প্রজনন হার আরো কমে ২১০০ সাল নাগাদ ১ দশমিক ৭-এ ঠেকতে পারে।

তালিকায় ৮০ বছরে জন্ম হার প্রায় অর্ধেক কমার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে জন্মহার ছিল প্রায় ২ শতাংশ। ২১০০ সালে এটি হতে পারে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন হলে তা আরও কমে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

গবেষকরা বলছেন, প্রজনন হারের ক্রমাবনতি মোকাবেলায় বিশ্বের প্রস্তুতি সন্তোষজনক নয়। অথচ পরিবর্তিত ‘চোয়াল ঝুলে যাওয়া’ পরিস্থিতি ভবিষ্যৎ সমাজের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাঁরা বলছেন, প্রজনন হার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে চলতি শতকের শেষে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের জনসংখ্যাই এখনকার তুলনায় অনেকটা কমে যাবে।

প্রজনন হার কমার পেছনে কর্ম ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের আগের তুলনায় পদচারণ বৃদ্ধির পাশাপাশি জন্মনিরোধক ব্যবহারের আধিক্যকে কারণ হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।

তাঁরা বলছেন, কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না হলে ২১০০ সালের মধ্যে স্পেন, জাপান, পর্তুগাল, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ২৩টি দেশের জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে অর্ধেকে নামবে। সাধারণত প্রজনন হার ২ দশমিক ১-এর কম হলে জনসংখ্যার আকার কমতে শুরু করে।

গবেষকদের হিসাবে, ২০৬৪ সাল নাগাদ বিশ্বে মানুষের সংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছালেও তার ৩৬ বছর পর এ সংখ্যা ৮৮০ কোটিতে নামবে। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৮০ কোটি। তবে বিশ্বের অনেক দেশে আবার প্রজনন হার কমাকে ‘সফলতা’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

 

প্রজনন হারের এই ক্রমাবনতি জাপান, ইতালি, স্পেনসহ বেশ কিছু দেশের জন্য এখনই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ভাষ্য গবেষকদের। তাঁদের মতে, জাপানের জনসংখ্যা এ শতকের শেষ নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে মাত্র পাঁচ কোটি ৩০ লাখে, যেখানে ২০১৭ সালেও দেশটির জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ইতালিতে ২০১৭ সালে জনসংখ্যা ছিল ছয় কোটি ১০ লাখ; প্রজনন হার কমতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দুই কোটি ৮০ লাখে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যে ২৩টি দেশের জনসংখ্যা নিয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র দুটির জনসংখ্যা এখনকার চেয়ে অর্ধেকের কিছু বেশি থাকতে পারে, বলছেন গবেষকরা। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক ক্রিস্টফার মুরে বলেছেন, এটা ‘চোয়াল ঝুলে পড়া’র মতো ব্যাপার।

প্রজনন হার কমায় চীনের জনসংখ্যাও আগামী আট দশকে অনেক কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, আগামী চার বছরের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যা হবে ১৪০ কোটি, যা সর্বোচ্চ শিখর। পরে কমতে কমতে ২১০০ সাল নাগাদ হবে ৭৩ কোটি ২০ লাখ।

গবেষকদের ধারণা, যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ২০৬৩ সালে হবে সবচেয়ে বেশি, সাত কোটি ৫০ লাখ। ২১০০ সালে সেটি কমে নামবে সাত কোটি ১০ লাখে।

বিশ্বের ১৯৫টি দেশের ১৮৩টিতেই প্রজনন হার এমন হবে যে তা আর প্রতিস্থাপনযোগ্য থাকবে না; ফলে বিষয়টি সবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। জনসংখ্যা কমলে কার্বন নিঃসরণ কমবে, কমবে বন-বনাঞ্চলের বিনাশ। ফলে প্রজনন হার কমাকে অনেকে ‘ভালো’ বললেও বিজ্ঞানীরা খুশি হতে পারছেন না। কেননা, তাঁদের হিসাবে ২১০০ সাল নাগাদ তরুণদের তুলনায় বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা এখনকার অনুপাতে অনেক বেশি থাকবে।

অধ্যাপক মুর বলেন, ‘এটি সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বৃদ্ধদের এ পৃথিবীতে কারা কর দেবে? বেশি বয়সীদের স্বাস্থ্যসেবায় কারা অর্থ খরচ করবে? কারা তাঁদের দেখভাল করবে? সে সময় চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সুযোগ থাকবে তো?’

জনসংখ্যা বাড়াতে যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশই কয়েক বছর ধরে অভিবাসনের ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ দেশেরই জনসংখ্যা যখন সংকুচিত হতে শুরু করবে, তখন শুধু অভিবাসনের মাধ্যমে এ সংকটের সুরাহা হবে না। প্রজননে উৎসাহিত করতে অনেক দেশ সবেতন পিতৃত্বকালীন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি, বিনা মূল্যে শিশুসেবাসহ নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে। তবে এগুলোই সমাধান, তা-ও বলা যাচ্ছে না।

‘আপনি যদি কোনো সমাধান বের করতে না পারেন, তাহলে মানব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যদিও তা হতে আরো বশ কয়েকটি শতক লাগবে’, বলেছেন অধ্যাপক মুরে। তবে প্রজনন হার বাড়াতে গিয়ে নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকারের সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না। তেমনটা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। সূত্র : বিবিসি ও টিবিএস নিউজ।

Development by: webnewsdesign.com