সীমান্তে উত্তেজনা, মোদির ‘দোলনা নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ | ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

সীমান্তে উত্তেজনা, মোদির ‘দোলনা নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন

২০১৪ সালে প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরেই বিদেশনীতির প্রশ্নে নতুন কিছু করে দেখাতে উদ্যোগী নরেন্দ্র মোদি, ভারতের সাবরমতীর কাছে দোলনায় দুলেছিলেন চীনের প্রবল প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে। ২০১৮ সালে উহানের মনোরম হ্রদের ধারে কূটনৈতিক আড্ডায় মেতেছিলেন এই চীনা সর্বাধিনায়কের সঙ্গেই। মাত্র আট মাস আগে মমল্লপুরমের ঐতিহাসিক আবহে নদীবক্ষে আলোচনা হয়েছিল মোদি-শি-র।

এদিকে পূর্ব লাদাখে গত দু’মাস ধরে চীনের নিরবচ্ছিন্ন চাপের মুখে বিরোধীরা ধারাবাহিক ভাবেই প্রশ্ন তুলছিলেন, এত করে লাভটা কী হল? আর আজ অন্তত ২০ জন সেনার মৃত্যুর পরে (সাড়ে চার দশক পরে চীনের সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু) ঘরোয়া রাজনীতিতে প্রশ্নটা আরও বাড়ছে।

এমন অভিযোগও উঠছে, যতটা গর্জে ওঠার কথা ছিল ‘ছাপান্ন ইঞ্চি’ খ্যাত প্রধানমন্ত্রীর, তার ধার-কাছ দিয়েও গেল না তার সরকার। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘৫ মে-র পর থেকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নীরব। বিদেশি সেনা ভূখণ্ড দখল করে বসে রয়েছে, অথচ দেশের প্রধান চুপ, অন্য কোনো দেশে এমন হত বলে ভাবা যায়?’’ শুধু তাই নয়, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ বিরোধীরা যখন ৫ মে-র পর থেকে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন, চীন ভারতের ভূখণ্ড কতটা দখল করেছে, সরকার টুঁ শব্দ করেনি। বরং এক গুরুত্বপূর্ণ, বর্ষীয়ান মন্ত্রী বেফাঁস কিছু বলে ফেলে আবার তা প্রত্যাহার করেন।

অথচ আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, চীন নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে। তা হলে এত দিন কেন তা স্বীকার করা হয়নি?

বিরোধীরা এ প্রশ্নও তুলেছেন, এত জন সেনার মৃত্যুর পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন প্রায় ২০ ঘণ্টা বাদে প্রথম বিবৃতি দিল এবং তাও সাংবাদিকদের অবিরল প্রশ্নের পর! যে বিবৃতিতে বলা হল, ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার স্থিতাবস্থার পরিবর্তন করার লক্ষ্যে চীন সচেষ্ট হয় ১৫ জুন রাতে। তার ফলাফল, মারাত্মক সংঘর্ষ। চীন দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের তৈরি চুক্তি পালন করলে দু’পক্ষেরই প্রাণহানি এড়ানো যেত।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবের মন্তব্য, ‘‘সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রেখে আলোচনার মাধ্যমে জট ছাড়াতে আমরা সংকল্পবদ্ধ। ভারতের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, যে প্রাণহানি হয়েছে, তার তুলনায় কেন্দ্রের পাল্টা জবাব অনেকটাই নরম সুরে বাঁধা।

অন্যদিকে, বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ নিহত সেনাদের ‘দেশভক্ত’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘‘এখন উত্তেজনা প্রশমিত করাই আমাদের লক্ষ্য। যে রাস্তাটি তৈরি হচ্ছে সীমান্তে তার কাজ চালু রাখাও কর্তব্য।’’

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী থেকে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি সবাই চীনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে ভারতকে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় দেখতে চেয়ে মুখ খুলেছেন।

তবে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের সম্মিলিত মত, পাকিস্তানের সীমান্ত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে ভাবে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে প্রত্যাঘাতের রাস্তায় যাওয়া হয়, ভারতের চীন নীতি যে তার থেকে বহুগুণ নরম, তা আজকের ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে। পুলওয়ামা হামলার প্রত্যাঘাতে বালাকোট অভিযানের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ঘরে ঢুকে মেরে আসাই তাদের নীতি। এবার তো চীন ঘরে ঢুকে মেরে গেল!

সূত্র: আনন্দবাজার।

Development by: webnewsdesign.com