যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ সিটিতে অনির্দিষ্টকালের কার্ফিউ, থামছে না বিক্ষোভ, নিহত ১০

বুধবার, ০৩ জুন ২০২০ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রে  ২৪ সিটিতে অনির্দিষ্টকালের কার্ফিউ, থামছে না বিক্ষোভ, নিহত ১০

গতকাল মঙ্গলবারও গোটা আমেরিকায় বিক্ষোভ-মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাত ১১টা এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত আগের তিনদিনের মত কোন হামলা, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ কিংবা লুটতরাজের ঘটনা ছিল না। গত চারদিনের বিক্ষোভ চলাকালে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। ২ জুন ভোররাতে লুটের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ ফিলাডেলফিয়া সিটিতে আগ্নেয়াস্ত্রের দোকান ‘ফায়ারিং লাইন ইনক’এ প্রবেশকালে স্টোরের মালিকের গুলিতে এক ব্যক্তি মারা গেছে।

একইসিটিতে বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে এটিএম মেশিন উড়িয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে আরেক যুবক গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। সোমবার দ্বিতীয় রজনীর মত কার্ফিউর মধ্যেই ফিলাডেলফিয়া সিটিতে হরিলুটের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। একই রাতে লাসভেগাসে একটি ফেডারেল ভবনে লুটের চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব কারণে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুনরায় কার্ফিউ বহাল হয় নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, আটলান্টা, ওহাইয়ো, লসএঞ্জেলেস, সান্তা মনিকা, বেভার্লী হিল্স, সানফান্সিসকো, ওকল্যান্ড, মিনিয়াপলিসসহ ডজন দুয়েক সিটিতে।

২০ ডলারের একটি জাল নোট ভাঙানোর অভিযোগে এক স্টোর মালিকের টেলিফোনে ২৫ মে অপরাহ্নে মিনিয়াপলিস সিটির টহল পুলিশ এসে গ্রেফতার করে জর্জ ফ্লয়েডকে (৪৬)। এরপর তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গাড়িতে উঠানোর পর কয়েক মিনিট পর গাড়ি থেকে বের করে সেই গাড়ির পেছনের চাকার নিকটে জর্জকে ফেলে দিয়েই তার ঘাড়ের ওপর হাটু দিয়ে চেপে ধরেন পুলিশ অফিসার ডেরেক চোভিন (৪৪)। এ সময়ে জর্জ বারবার আকুতি জানিয়ে বলেন যে তিনি নি:শ্বাস নিতে পারছেন না। তার এ অকুতি আমলে না নিয়ে চোভিন মিনিট হাটু সরাননি। এভাবেই তার মৃত্যু হয় এবং এ দৃশ্য একজন পথচারি তার ফোনে ধারণ করেছিলেন। পরদিন তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশের পর সারা আমেরিকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

ক্ষোভের সেই আগুণ এখনও অব্যাহত থাকলেও অভিযুক্ত ঘাতক চোভিনের বিরুদ্ধে প্রথম ডিগ্রির হত্যা মামলা হয়নি। এমনকি তার তিন সহযোগিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলেও তাদেরকে ঐ মামলায় চোভিনের সাথে যুক্ত করা হয়নি। এসব কারণে ক্ষোভের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে।

কৃষ্ণাঙ্গ জর্জকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং পুলিশী নির্যাতনের নিন্দা ও বর্ণ-বিদ্বেষমূলক আচরণে লিপ্তদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবিতে চলমান এ আন্দোলনে গত তিনদিন ধরে কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছে। ওরা মিছিলে হাটতে হাটতে সুযোগ বুঝে পার্শ্ববর্তী দামি পণ্যের স্টোরে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ করেছে। রবিবার ও সোমবার রাতে বেশ কটি সিটিতে কার্ফিউর মধ্যেও লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে ফিলাডেলফিয়া, লসএঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, মায়ামী, পোর্টল্যান্ড, সিয়াটল, লাসভেগাস, সেন্টলুইস প্রভৃতি স্থানে। নিউইয়র্ক সিটিতে সোমবার রাতে কার্ফিউ সত্বেও বহু দোকানে হামলা, ভাংচুরের পর মূল্যবান সামগ্রি লুট করা হয়েছে।

অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটতরাজের অভিযোগে নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, লসএঞ্জেলেস, আটলান্টা, মিনিয়াপলিস প্রভৃতি স্থানের পুলিশ কর্তৃক মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিনে ৬৫০০ দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্ত শনাক্তের প্রক্রিযার পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও পুলিশ উল্লেখ করেছে। ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক, আটলান্টা, লসএঞ্জেলেস সিটিতে লুটপাটের শিকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশীরাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।

তবে মঙ্গলবার দিনভর ৬০ থেকে ৭০ সিটিতে বিক্ষোভ হলেও পরিস্থিতি ছিল একেবারেই শান্ত। যদিও সন্ধ্যায় কার্ফিউ জারির পরও অনেকেই মিছিল করেছেন এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন পুলিশের সামনেই। কার্ফিউ ভঙ্গেও জন্যে কাউকে গ্রেফতারের চেষ্টা না করে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ বাসায় যাবার আহবান জানান নিউইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ৮৭ বছর পর নিউইয়র্ক সিটিতে কার্ফিউ জারির ঘটনা ঘটলো। ৭ জুন পর্যন্ত কার্ফিউ বহাল থাকবে নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, আটলান্টা, লসএঞ্জেলেস, মিনিয়াপলিস প্রভৃতি স্থানে।

শেষ কৃত্যানুষ্ঠান ও দাফন:
এদিকে, পুলিশের পাশবিকতার শিকার জর্জ ফ্লয়েডের লাশ সৎকারের আগে তিন সিটিতে তার কফিনে আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানানো হবে। মিনিয়াপলিসে পুলিশের বর্বরতায় মৃত্যুবরণকারি জর্জের বাড়ি হচ্ছে টেক্সাস স্টেটের হিউস্টনে। সেখানে তাকে দাফনের আগে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের অনুষ্ঠান হবে মিনেসোটা ও নর্থ ক্যারলিনা। বৃহস্পতিবার বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি-সমাবেশ হবে মিনিয়াপলিসে নর্থ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গনে। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ‘ন্যাশনাল এ্যাকশন সেন্টার’র নেতা আর্ল শার্পটন এ কর্মসূচির সমন্বয় করবেন।

এর দুদিন পর শনিবার নর্থ ক্যারলিনার রেফোর্ডে অর্থাৎ জর্জের জন্মস্থানে দ্বিতীয় শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাবেশ হবে কফিন সামনে নিয়ে। এটি অনুষ্ঠিত হবে সেখানকার ক্যাপ ফিয়ার কনফারেন্স বি সদর দফতরে বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। তার শ্রেষকৃত্যানুষ্ঠান হবে ৯ জুন সকাল ১১টায়। এর আগেরদিন সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হিউস্টনের ফাউন্টেন অব প্রেইজে তার কফিন খোলা রাখা হবে সর্বসাধরণের দেখার জন্যে। এ ব্যবস্থা করবে টেক্সাসের দ্য ফোর্ট বেন্ড মেমরিয়্যাল প্ল্যানিং সেন্টার।

Development by: webnewsdesign.com