নৌ দুর্ঘটনার বিচারে বিশেষ আদালত গঠন করা যেতে পারে: জিএম কাদের

বৃহস্পতিবার, ০৯ জুলাই ২০২০ | ৪:১৩ অপরাহ্ণ

নৌ দুর্ঘটনার বিচারে বিশেষ আদালত গঠন করা যেতে পারে: জিএম কাদের
ফাইল ছবি

নৌ দুর্ঘটনার বিচারে বিশেষ আদালত গঠন করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ময়ুর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চ শত যাত্রী নিয়ে নিমজ্জিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা জানি ৩৪টির মতো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

 

সরকারি তথ্যমতে দেশের ৩৫ শতাংশ যাত্রী নৌ পথে যাতায়াত করে। নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৯ সালে মোট নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮২০, এতে প্রাণহানি হয়েছে ৬৮৫ জনের। একই সূত্রে বলা হয়েছে, গত ২৫ বছরে লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে ৭০০টি এবং মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার লোকের।

তিনি বলেন, কোনো দুর্ঘটনা হলেই একটা তদন্ত কমিটি হয় এবং একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। এই রিপোর্টগুলোতে যে দোষত্রুটি থাকে সেটা হলো নকশার ত্রুটি, অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন ইত্যাদি। এ সকল দেখার জন্য সরকারের নির্দিষ্ট সংস্থা রয়েছে। যে কোনো কারণেই হোক এই দায়িত্ব তারা সঠিকভাবে পালন করছেন না। করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ক্রমান্বয়ে কমে আসত।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, অভিযোগ আছে প্রশিক্ষণবিহীন লোকজনকে টাকার বিনিময়ে লঞ্চ চালানোর সার্টিফিকেট দেয়া হয়। লঞ্চের ত্রুটি-বিচ্যুতি অর্থের বিনিময়ে সনদ প্রদানের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয়। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করা হয় দুর্নীতি মাধ্যমে। এগুলোর অভিযোগ আমরা গণমাধ্যম থেকে বিভিন্ন সময়ে জেনেছি। আমি এই বিষয়গুলোর দিকে আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 

তিনি বলেন, আমাদের জানামতে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া কোনো নৌ দুর্ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়নি। শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় দুর্ঘটনার লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে ফয়সালা আবশ্যক, এর জন্য বিশেষ আদালত গঠন করা যেতে পারে।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সামনে ঈদ উল আজহা বা কোরবানির ঈদ আসছে। প্রায় প্রতি বছর এই সময়ে চামড়ার প্রকৃত মূল্য নিয়ে একটি সংকট সৃষ্টি করা হয়। কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানি করায় নিষেধাজ্ঞা আছে। কাঁচা চামড়া পচনশীল, খুব বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না।

তিনি বলেন, দুস্থ, মিসকিন, এতিম, ফকির এরা তো কোনো দাবি করতে পারে না। কাজেই সবসময় এদের দাবিটাকে পেছনে ফেলে রাখা হয়। চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রায় বিনা পয়সায় এই চামড়াগুলো কিনে তারা ব্যবসা করে। আমি মনে করি এই সিন্ডিকেট ভাঙা অত্যন্ত জরুরি।

কাদের বলেন, করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন খুব ব্যয়বহুল বা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সাপোর্ট যতটুকু সম্ভব থাকলেই মৃত্যুর হার অনেকাংশেই কমে আসবে। সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

তিনি বলেন, করোনার বিপদের মধ্যে আবার নতুন করে আরেকটি বিপদ দেখা দিয়েছে সেটা হল বন্যা। উজানের পানিতে দেশের বেশ কয়েকটি জেলার নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং প্রতিদিন এই প্লাবিত হওয়া এলাকার সংখ্যা বাড়ছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর জেলার খবর জানা গেছে এবং প্রতিদিন এটা বাড়ছে।

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উক্ত জেলার বন্যার পানি পর্যায়ক্রমে নিচের দিকে এসে নিম্নবর্তী জেলাসমূহকে প্লাবিত করবে, এটা বিশেষজ্ঞদের কথা। এবারের বন্যা ১৯৯৮ সালের মতো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সে সময় বন্যা ৩৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল। তাই বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। এটা প্রধানমন্ত্রীর ওপর একটা বাড়তি চাপ।

Development by: webnewsdesign.com