মাদকের চালান নিয়ে ধরা পড়া পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশ না মাদক ব্যবসায়ী বলবো?!

শনিবার, ২৭ জুন ২০২০ | ৫:৪৪ অপরাহ্ণ

মাদকের চালান নিয়ে ধরা পড়া পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশ না মাদক ব্যবসায়ী বলবো?!

পুলিশের কোন কর্মকর্তা যখন বিপুল পরিমাণ মাদকের চালানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন তখন তাকে পুলিশ না মাদক ব্যবসায়ী বলবো? নাকি পুলিশমাদক ব্যবসায়ী বলবো?! গত বুধবার (২৪ জুন) গভীর রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মাদকের একটি বড় চালান নিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) শহীদ ও এসআই রাকিবসহ ৫ জন। ১৮ হাজার ৪৭০ পিস ইয়াবা, ৪৫ বোতল ফেনসিডিলসহ র‌্যাব-১ উত্তরার একটি দল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি টোলপ্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শহীদুর রহমান বর্তমানে ময়মনসিংহ সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক ও রাকিবুল হাসান গাজীপুর টঙ্গী ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদে কর্মরত। বর্তমান করোনাকালীন সময়ে পুলিশের ভুমিকা দেশে প্রশংসনীয়। পরিবারের সদস্যরা যখন মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনকাফন করতে অনীহা প্রকাশ করছেন ঠিক সেই সময় পুলিশ সদস্যরা নিজের জীবন বাজি রেখে পরিবার পরিজনের কথা না ভেবে দেশ ও দশের কাজে যেভাবে নিজেদের নিয়োজিত করছেন তাতে তাদের প্রশংসা না করে কোন উপায় নেই। আর তাই গণমাধ্যম প্রতিদিনই পুলিশের এই ভালো কাজগুলো জনসাধারণের সামনে তুলে ধরছেন। দেশের এই কঠিন সময়ে পুলিশের কাজ মানুষের মাঝে পুলিশের ভাবমূর্তি অনেক বেশি উজ্জল করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

 

গত কয়েক দশক ধরে মানুষের মাঝে পুলিশের কতিপয় সদস্যদের কারণে পুলিশ নিয়ে যে ধারণা তা বলা চলে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি পুলিশের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধার জায়গাটা আগের চাইতে অনেক বেশি। তবে এ ভালোটা ধরে রাখার দায়িত্বটাও পুলিশেরই। তাদের মহৎ এবং দায়িত্বশীল কর্মকান্ডেই মানুষের মনের মাঝে এক উঁচু আসনে তাদের জায়গা করে দিবে। তবে শুধুমাত্র এই করোনাকালীন সময়েই যে পুলিশের কাজগুলো প্রশংসনীয় বা দেশের জন্য নিবেদিত হয়ে করা কাজ তা নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় দেশ ও জনগণের জন্য নিজের জীবন দেয়া পুলিশ সদস্যদের সংখ্যাটাও কম নয়।

 

একদশক আগেও পুলিশের যে বেতন ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ছিল তা চাহিদার তুলনায় কম ছিল। আর সে বিবেচনায় বর্তমান সরকার পুলিশের বেতনভাতা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বলা চলে দ্বিগুন করেছে। সৎভাবে জীবনযাপন করার জন্য এবং সাধারণ জনগণের সেবার মান বৃদ্ধি করার জন্যই সরকার পুলিশ বাহিনীকে এ ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন। তবে কথায় আছে কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। যারা সৎ তারা যেমন আগেও সৎ ছিলেন, তেমনি যারা  আগে অসৎ ছিলেন তারা এখনও অসৎই রয়ে গেছেন।  সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার কারণে কোন অসৎ অফিসারই যে সৎ হয় নাই তাও বলা যাবে না। তবে তাদের সংখ্যাটা কেমন তা বলা কঠিন।

 

আবার অসৎ, দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা দিয়ে পুরো পুলিশ বাহিনীকেও মূল্যায়ন করা যাবে না। কারণ আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে যারা কাজ করে যাচ্ছেন তারা এই বাহিনীরই সদস্য। আর যদি অধিকাংশ সদস্যই সৎ এবং নিষ্ঠাবান না হতেন তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থাটা এখন দেখছেন তাও দেখতে পেতেন না। তবে পরিতাপের বিষয়টি হলো যে, অনেক সময়ই নিজ বাহিনীর সুনাম নষ্ট হবে এমনটি ভেবে অপরাধ করা সদস্যের অপরাধ ঢাকতে কাজ করেন অনেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এমনটা অভিযোগ জনসাধারণদের। বিশাল এ বাহিনীতে যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের সংখ্যাটা বেশি না হলেও তাদের কারণে পুরো বাহিনীর সুনাম নষ্ট হওয়ার বিষয়টিকে অনুভব করতে হবে দায়িত্বশীলদেরই।

 

অপরাধীর অপরাধগুলো তুলে ধরে বিচারের আওতায় আনা হলে এ বাহিনী যেমন কলঙ্কমুক্ত হয়, তেমনি পরবর্তীতে অন্যদের অপরাধ করতে নিরুৎসাহিত করে। সেক্ষেত্রে বাহিনীটির উপর যে সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গাটি আরো পোক্ত হবে তা বুঝতে হবে দায়িত্বশীলদের। একবার ভেবে দেখুন, মাদকের চালান নিয়ে ধরা পড়া পুলিশের এ কর্মকর্তা যখন ওসি (অপারেশন) হিসেবে টঙ্গী পশ্চিম থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন তখন সেখানকার মাদক ব্যবসায়ীরা কতটা ‍সুযোগ পেয়েছে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে। মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করাতো দূরের কথা তিনিই হয়তো সরবরাহকারী ছিলেন এমনটা বললে কতটা অযৈাক্তিক হবে?

 

আসলে বিষয়টি কতটা ভয়ঙ্কর ভেবে দেখুন। যাদের দায়িত্ব দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা তারাই যদি অপরাধী হয়ে যান তাহলে সেখানকার সাধারণ মানুষ কতটা অসহায়। তবে সময় এসেছে বিষয়গুলো নিয়ে ভাববার। পুলিশ বাহিনীকেই দায়িত্ব নিতে হবে পুলিশের ভিতর লুকিয়ে থাকা এ ধরণের অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করার। তবেই শতভাগ সেবা পেতে পারে এই বাহিনী থেকে সাধারণ মানুষ।

Development by: webnewsdesign.com