সংক্রমণ বেশি থাকা ঢাকায় লকডাউন নিয়ে হেলাফেলা

বুধবার, ২৪ জুন ২০২০ | ১২:১৭ অপরাহ্ণ

সংক্রমণ বেশি থাকা ঢাকায় লকডাউন নিয়ে হেলাফেলা
কেবল বড় বড় সভা হলো, আলোচনা হলো। কিন্তু পূর্ব রাজাবাজার ছাড়া ঢাকায় আর কোথাও এলাকাভিত্তিক লকডাউন শুরু করতে পারেনি সরকার। পুরো বিষয়টিই এখন ঝুলে গেছে। শিগগিরই ঢাকায় আর কোথাও এলাকাভিত্তিক লকডাউন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। অথচ ঢাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এখনো সুনির্দিষ্টভাবে ঢাকার এলাকাগুলো চূড়ান্তই করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন পরীক্ষামূলকভাবে চলা ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন পরিস্থিতি ২১ দিনের মাথায় পর্যালোচনা করে তার ভিত্তিতে অন্য এলাকা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি দলের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন গতকাল মঙ্গলবার থেকে সাত দিন বাড়িয়ে ২১ দিন করা হয়েছে, যা আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। আর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলাকা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে তাদের লকডাউন বাস্তবায়ন করতে। ফলে এসব তথ্য বলছে, ঢাকায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন পিছিয়ে গেল।
অথচ ২৩ দিন আগে ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাকে লাল (উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ), হলুদ (মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ) ও সবুজ (নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ) এলাকায় ভাগ করে ‘ভিন্নমাত্রায়’ এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঢাকার আর কোথাও লকডাউন হয়নি। অবশ্য ঢাকার বাইরে ১৮টি জেলায় ছোট ছোট দেড় শর বেশি এলাকায় লকডাউন চলছে, ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে।
ঢাকায় আর কোথাও এলাকাভিত্তিক লকডাউনের সম্ভাবনা কম। পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন পর্যালোচনা করে অন্য এলাকা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ।
অথচ সংক্রমণ বেশি থাকা ঢাকায় লকডাউন নিয়েই হেলাফেলা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কারিগরি দল প্রাথমিকভাবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীন মোট ৪৫টি এলাকাকে লাল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কম ব্যাহত করে সংক্রমণ বেশি থাকা ছোট ছোট এলাকা চিহ্নিত করে ওই সব এলাকাকে লাল এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে লকডাউন দেওয়া। কিন্তু সেই কাজটিও হচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস গতকালও বলেছেন, যেদিন এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত পাবেন, তারপর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা হয়তো সময় লাগবে। তবে তাঁদের যে প্রস্তুতি, তাতে তার আগেই শুরু করতে পারবেন। প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামও।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো সুনির্দিষ্টভাবে এলাকাই চিহ্নিত করা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি দলের এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কাজ চলছে। চিহ্নিত করতে সময় লাগবে।
জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, কোনোভাবেই আর দেরি করা উচিত নয়। ঘন বসতিপূর্ণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত স্বাস্থ্যবেষ্টনী দেওয়া উচিত।
পূর্ব রাজাবাজারের পরিস্থিতির উন্নতি
পূর্ব রাজাবাজারে ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন শুরু হয়। এখানে শুরুতে রোগী ছিলেন ৩১ জন। লকডাউন শুরুর পর ১৯ জুন পর্যন্ত ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৪ জন আক্রান্ত হন ১৪ জুন পর্যন্ত। শেষের তিন দিন রোগী শনাক্ত হয়েছে খুবই কম। এর মধ্যে ১৭ জুন ছয়জন নমুনা দিয়ে পজিটিভ হয় ১ জনের। ১৮ জুন ২২ জনের মধ্যে সবার নেগেটিভ আসে এবং ১৯ জুন ১৯ জনের মধ্যে দুজন শনাক্ত হন। অথচ প্রথম দিকে পাঁচ-সাতজন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ ছাড়া লকডাউন শুরুর সময় যাঁরা আক্রান্ত ছিলেন, তাঁদের প্রায় সবার লক্ষণ এখন ভালো। তবে এই এলাকায় আক্রান্ত একজন মারা গেছেন।
গতকাল পূর্ব রাজাবাজারের ভেতর একদল লোক জড়ো হয়ে লকডাউনের বিরোধিতা করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও পরে বুঝিয়ে তাঁদের শান্ত করা হয়।

Development by: webnewsdesign.com