কল করা মাত্রই মধ্যরাতে রোগীর বাসায় অক্সিজেন নিয়ে হাজির

মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ | ৬:৩৫ অপরাহ্ণ

কল করা মাত্রই মধ্যরাতে রোগীর বাসায় অক্সিজেন নিয়ে হাজির

গভীর রাত। সময়টা ১টা ৪০ মিনিট। সবাই নিদ্রায়। এমন সময়েই অক্সিজেন ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবকের হট লাইন নম্বরে কল। আকতার হোসেন নামের একজন ওই প্রান্ত থেকে বললেন, ‘আমার বাবার খুব শ্বাস কষ্ট। এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জরুরি ভিত্তিতে একটি অক্সিজেন দরকার।’

এমন খবরে তখনই রওনা দিলেন অক্সিজেন ব্যাংকের একজন স্বেচ্ছাসেবক। দিয়ে আসলেন চমেক হাসপাতালের সেই রোগীকে। ভাটিয়ারি এলাকার ওই রোগী এখন সুস্থের পথে।

এভাবে করোনাভাইরাস প্রকোপের এই সময়ে শ্বাস কষ্টের রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের চরম সংকটে দিনরাত সমানে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাউকে সিলিন্ডারসহ কিংবা কাউকে সিলিন্ডারে রিফিল করে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীকে দেওয়া হচ্ছে সেবা। শ্বাস কষ্টের রোগীর মিলছে স্বস্তি। গত ২০ দিন আগে যাত্রা করা এই অক্সিজেন ব্যাংকের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২২ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাত রোগী সেবক খ্যাত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসারের উদ্যোগে এই অক্সিজেন ব্যাংক চলছে।

প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, ‘হাসপাতালে থাকা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট চলছে। তবে বিলম্ব হলেও কোনো মতে পাওয়া যায়। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে কারো বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকার কথা নয়। ফলে বাসায় হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন সেই রোগী। তাই হাসপাতাল ও বাসা-বাড়িতে থাকা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে। সমাজের হৃদয়বান মানুষদের মাধ্যমে এসব সিলিন্ডার সংগ্রহ করা হয়।’

জানা যায়, অক্সিজেন ব্যাংকের ছয়টি কেন্দ্র থেকে সিলিন্ডার সরবরাহ করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো হলো- ২নং গেইট মোড়, পাহাড়াতলী বার কোয়াটার, বন্দর কলোনি, হালিশহর, ভাটিয়ারি বিএম গেইট ও অক্সিজেন মোড়। রোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র জমা রাখার মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়। ব্যবহারের পর সিলিন্ডার দেওয়ার সময় পরিচয়পত্রও ফেরত দেওয়া হয়। রিফিলের টাকা দিতে     অক্ষম হলে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। টাকা দিতে সক্ষম হলে নেয়া হয়।

প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেসার ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অক্সিজেন না পেয়ে নিজের বাবার অন্তিম যাত্রার পর থেকে অজ্ঞাত রোগীর সেবা করে আসছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০০ অজ্ঞাত রোগীর সেবা করেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর তিনি এখন করোনা রোগীর সেবায় অন্যতম যোদ্ধা।

চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবায় কাজ করছেন প্রতিনিয়ত। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সমুহে তিনি অবিরত অক্সিজেন, অক্সিমিটার, সুরক্ষা সামগ্রী, মাস্কসহ নানা সামগ্রী দিয়ে আসছেন।

Development by: webnewsdesign.com