মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দুর্যোগের মধ্যেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা সামনে রেখে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার আগামী বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় তথা আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার অংকে যা ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ঘাটতির চেয়ে ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬শ’ ৮ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই ধরা হয়েছে অনুন্নয়ন ব্যয় বা সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদবাবদ ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধে ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।
এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিতে যাবে ২ হাজার ৬ শ’ ৫৪ কোটি টাকা। অন্যান্য উন্নয়ন খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬ শ’ ২৪ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজটে দেখা গেছে, ব্যয়ের চার ভাগের মধ্যে তিনভাগ অর্থই সরকার আয় করতে চায়। প্রধান খাত হিসেবে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ড ছাড়াও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬ শতাংশের সমান এবং চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা বেশি।
ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতের সহায়তা ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি ব্যাংকিং খাত থেকে খুব বেশি পরিমান ঋণ নেয়, তাহলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাবে। ফলে বিনিয়োগ কমে যাবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যহত হবে।
২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৪ শতাংশ।
Development by: webnewsdesign.com