এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান, ১৭৫ স্থাপনায় লার্ভা

সোমবার, ০৮ জুন ২০২০ | ৭:০৬ অপরাহ্ণ

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান, ১৭৫ স্থাপনায় লার্ভা

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সকল ওয়ার্ডে (৫৪টি) বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে।

সোমবার তৃতীয় দিনে মোট ১৪ হাজার ৫৩টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ইত্যাদি পরিদর্শন করে মোট ১৭৫টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ৯ হাজার ৫৬৭টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ অর্থাৎ বিভিন্ন স্থানে তিন দিনের বেশি জমা পানি পাওয়া যায়।

এ সকল স্থান ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীগণ পরিষ্কার করেন এবং মশকনিধন কর্মীগণ মশার কীটনাশক প্রয়োগ করেন। এছাড়া এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ৯টি মামলায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। পরিত্যক্ত টায়ার, বালতি, ফুলের টব, বোতল, পানির মিটার, গ্যারেজ, পানির হাউজ, মাটির পাত্র, ভাঙ্গা মগ, বাড়ির মেঝে, পানির ট্যাংক, প্লাস্টিকের পাত্র, ছাদের ড্রেন, দইয়ের পাত্র, পরিত্যক্ত কমোড, ডাবের খোসা, ভাঙ্গা পাতিল, দুই বাড়ির মধ্যবর্তী স্থান, বেইজমেন্ট ইত্যাদি স্থানের জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।

গত ৬ জুন থেকে আজ পর্যন্ত ৩ দিনে ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ৩৯ হাজার ৮৩৭ টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ৫৩৯ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এবং ২৭ হাজার ৮০৩ টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এছাড়া এ ৩ দিনে মোট ১ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

চিরুনি অভিযান পরিচালনার উদ্দেশে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আবার প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের ১টি সেক্টরে অর্থ্যাৎ ১০টি সাবসেক্টরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি সাবসেক্টরে ডিএনসিসির ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১ জন মশক নিধনকর্মী, অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশককর্মী ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কিনা, কিংবা কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে আছে কিনা, কিংবা ময়লা-আবর্জনা আছে কিনা, যা এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক, তা পরীক্ষা করছে।

চলমান এই চিরুনি অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৯ জন কীটতত্ববিদ, ডিএনসিসির ৩ জন কীটতত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাগণ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডিএনসিসির চিরুনি অভিযানসহ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে সমগ্র ডিএনসিসিতে চিরুনি অভিযান সম্পন্ন করা হবে।

চিরুনি অভিযান চলাকালে যেসব বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা কিংবা এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে, তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি অ্যাপে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এর ফলে চিরুনি অভিযান শেষে ডিএনসিসির কোন কোন এলাকায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে তার একটি ডাটাবেস তৈরি হবে। ডাটাবেস অনুযায়ী পরবর্তীতেও তাদেরকে মনিটর করা সহজ হবে।

আজ উত্তরা অঞ্চলে মোট ১ হাজার ১১৩টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২৪টিতে এডিস মশার লার্ভা ও ৮১৮টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়ন ৩টি বাড়ির মালিককে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মিরপুর-২ অঞ্চলে মোট ৩ হাজার ১৩টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৭টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে ১ জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্য বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে এডিসের লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ৯৭৮টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। মহাখালী অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৭১৪টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১ হাজার ২১১টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম কর্তৃক মহাখালী ওয়ারলেস এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ৫টি মামলায় মোট ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

মিরপুর-১০ অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৮১৪টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৭টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৭৫৪টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। কারওয়ান বাজার অঞ্চলে মোট ২ হাজার ২০২টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ২২টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১ হাজার ৮০০টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

হরিরামপুর অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৪২৪টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২১টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১ হাজার ১২০টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। দক্ষিণখান অঞ্চলে মোট ১ হাজার ২০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১০টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৫৮২টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

উত্তরখান অঞ্চলে মোট ৭৩১টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৪৮৩টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। ভাটারা অঞ্চলে মোট ৪৪৭টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৫টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৩৭৪টিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। সাঁতারকুল অঞ্চলে মোট ৫৭৫টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৪৫০টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।

এডিস মশার প্রজনন উপযোগী স্থানগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনাপূর্বক কীটনাশক ছিটানো হয়েছে এবং জনসাধারণকে এ বিষয়ে পরবর্তীতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, চলমান এ অভিযানের পূর্বেও ১৬ মে থেকে ঈদুল ফিতরের পূর্ব পর্যন্ত ১, ৬, ১২, ১৮ ও ৩২ নম্বর, ৫টি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সে সময় ৯ হাজার ৪৬৩টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৮৭টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।

Development by: webnewsdesign.com