মুমিনের প্রতি রমজানের পাঁচ উপহার

শনিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২০ | ২:৪৫ অপরাহ্ণ

মুমিনের প্রতি রমজানের পাঁচ উপহার

রমজান মুমিনের প্রতি আধ্যাত্মিক সাধনার মাস, আত্মিক উত্কর্ষ অর্জনের মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন পার্থিব ও অপার্থিব জীবনের পাথেয় অর্জন করে। যা মুমিনের জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সাহায্য করে। পবিত্র রমজান মুমিনের ধর্মীয় জীবনে যে ঐশ্বর্য দান করে, তার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।

এক. তাকওয়া : তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মুমিনের সবচেয়ে বড় অর্জন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে রমজানের রোজাকে তাকওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর যেন তোমরা মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) হতে পারো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

মূলত বান্দা সাধারণ সময়ে তার জন্য বৈধ বিষয়গুলো পরিহার করার মাধ্যমে হারাম ও অবৈধ বিষয় পরিহারের শক্তি অর্জন করে এবং দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে সে আল্লাহর আনুগত্যের অনুশীলন করে। এ জন্য বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, ধোঁকা, প্রতারণা, অশ্লীলতা, অন্যের অধিকার নষ্ট করা, গিবত ও পরচর্চার মতো গুনাহর কাজগুলো পরিহার না করলে বান্দার রোজা পূর্ণতা লাভ করে না। আর গুনাহ ত্যাগই তাকওয়ার মূল উদ্দেশ্য। হাদিসে এসেছে, ‘রোজা শুধু পানাহার ত্যাগ করা নয়; বরং তা হলো মিথ্যা, ভ্রান্ত ও অনর্থক জিনিস পরিহার করা।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস ৩৬৪৮)

দুই. পাপমুক্ত হওয়া : রমজানের অন্যতম উপকার ও কল্যাণ হলো মানুষকে পাপমুক্ত করা। রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ তার অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পাপমুক্ত করবে। এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে দূরে থাকার অনুশীলন করবে। পাপের প্রবণতা দূর করা সিয়াম সাধনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এ জন্যই মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি রোজা রাখো, তোমার কান, চোখ ও জিহ্বাও যেন রোজা রাখে মিথ্যা ও পাপ থেকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ৮৮৮০)

আর যারা পাপ পরিহার করতে পারে না তাদের ব্যাপারে বলেন, ‘কত রোজাদার আছে, যাদের রোজার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। কত নামাজ আদায়কারী আছে, যাদের রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই জোটে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৬৯০)

তিন. শারীরিক সামর্থ্য বৃদ্ধি : আল্লাহর অনুগ্রহ যে তিনি রোজার মাধ্যমে মানুষের শারীরিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করেন। যা অনেকাংশে প্রচলিত চিকিৎসা ও ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল রোজার আটটি উপকারিতা উল্লেখ করে সুস্থ ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের রোজা রাখার পরামর্শ দেন। উপকারিতাগুলো হলো—হার্ট ভালো থাকা, মস্তিষ্কের কার্যক্রম বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, কিডনি ভালো থাকা, লিভার ভালো থাকা, ধূমপান ত্যাগের সুযোগ, পরিপাকপ্রক্রিয়া কার্যকর হওয়া, অন্যান্য শারীরিক জটিলতা এড়ানো। (বিস্তারিত দেখুন

https://bit.ly/3eJv16Z)

চার. মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হওয়া : রোজার কারণে মানুষ ক্ষুধা ও অনাহারের কষ্ট বুঝতে পারে—যা তাকে মানবিক হতে সাহায্য করে। দীর্ঘ এক মাস পানাহার থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে মূলত মানুষ অভাবগ্রস্ত ও অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারে। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্বের যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনের জন্য যাঁর প্রতিনিধিত্ব করছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক ও সাযুজ্য যথেষ্ট নয়; বরং বহুমুখী সংযোগ ও সাযুজ্য তৈরি করতে হয়। যেখানে থেকে সে প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করবে এবং সৃষ্টিজগতের মধ্য থেকে যাদের শাসন, দেখভাল ও পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত, তাদের সঙ্গে তার নিবিড় সাযুজ্য অর্জন করাও গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য প্রয়োজন পবিত্রতা, উচ্চদৃষ্টি, অমুখাপেক্ষিতা, দয়া ও অনুগ্রহ, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা, ধৈর্য ও সহনশীলতা, শক্তি ও কঠোরতার মতো উচ্চগুণ অর্জন করা। রোজার মাধ্যমে মানুষ এসব গুণ অর্জনের সুযোগ পায়।’ (আরকানে আরবাআ, পৃষ্ঠা ২২৪-২২৫)

পাঁচ. প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ : রোজার মাধ্যমে মানুষের প্রবৃত্তির তাড়না দুর্বল হয়। ফলে সে নৈতিক স্খলন থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘হে যুবকরা! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা সাওম যৌনক্ষমতা দমন করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫০৬৫)

তবে এই কল্যাণ লাভের শর্ত হলো, যথাযথভাবে রোজা রাখা এবং রমজানে পানাহারসহ সব কিছুতে সংযত জীবন যাপন করা। ইফতার ও সাহিরতে জৌলুসপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ রোজার উদ্দেশ্য ব্যাহত করে অনেকখানি।

Development by: webnewsdesign.com