ভারত থেকে ডিজেল আনতে পাইপ লাইন নির্মাণ শুরু

শনিবার, ১৪ মার্চ ২০২০ | ১০:০২ অপরাহ্ণ

ভারত থেকে ডিজেল আনতে পাইপ লাইন নির্মাণ শুরু

ভারত থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ভারতের মুরালীগড় হতে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন রয়েছে। এখন শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ভারত অংশে পাঁচ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশে ১২৫ কিলোমিটার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ভারতের অংশে কাজ শুরু হয়ে গেছে।

জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের পার্বতীপুর রেলওয়ে হেড ডিপোতে জ্বালানি তেল রেলের ট্যাঙ্ক ওয়াগনে পরিবহন করা হয়। আমদানিকৃত, ইস্টার্ন লিমিটেড এবং স্থানীয় অন্যান্য উত্স হতে প্রাপ্ত জ্বালানি তেল চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনায় মজুদ করা হয়। সেখান থেকে নৌপথে দৌলতপুর ডিপো ও খুলনা পাঠানো হয়। পরে ট্যাঙ্ক ওয়াগনের মাধ্যমে পার্বতীপুরের রেল হেড ডিপোতে পাঠানো হয়। এতে সময় লাগে কমপক্ষে ৭ দিন। তাছাড়া এভাবে তেল পরিবহন করা ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সরকার ভারত থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রকল্প পরিচালক টিপু সুলতান ইত্তেফাককে জানান, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবর্তীপুর উপজেলা অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাইপ লাইন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিভিন্ন প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ অংশে কোনো কাজ শুরু হয়নি। তবে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিপন গ্যাস লিমিটেডকে। তিনি আরো জানান, তিনটি জেলার ৯টি উপজেলার মধ্য দিয়ে এই ১২৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্দা, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা, দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর উপজেলা এবং নীলফামারী জেলার নীলফামারী ও সৈয়দপুর হয়ে পার্বতীপুর রেলওয়ে ডিপোতে নিয়ে আসা হবে। তিনি আরো বলেন, পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ১৮৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং ১২৬ একর জমি হুকুম দখল করা হয় ২ বছরের জন্য। পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য এই ১২৬ একর জমি ব্যবহার করা হবে এবং পাইপ স্থাপনের ২ বছর পর তা মালিকদের নিকট ফেরত দেওয়া হবে। জমি দখলের জন্য ৩৯০০ পরিবারকে আট বার উচ্ছেদ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আর নোটিশ দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু হবে এবং ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ সমাপ্ত হবে। আশা করা যায় আগামী ২২ সালের জুলাই মাস থেকে পাইপ লাইনে তেল আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর মধ্যে ভারত সরকার দেবে ৩০৩ কোটি রুপি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন দেবে ৩০৬ কোটি ২৩ লক্ষ্য টাকা। তিনি আরো জানান, ভারত সরকার প্রতিবছর ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল পাইপ লাইনে সরবরাহ করবে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইতিমধ্যে বিদেশ থেকেই ২৪ কিলোমিটার পাইপ লাইন দেশে এসে পৌঁছেছে। বাকি পাইপ পথিমধ্যে রয়েছে যা অতি শিগগিরই দেশে পৌঁছবে। ওয়েল কোম্পানির জনৈক কর্মকর্তা আজম খান জানান, এ প্রকল্প চালু হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে সেই সঙ্গে তেলের অপচয় কমবে। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এই পাইপ দিয়ে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে ভারতীয় ৫ কিলোমিটার পাইপ লাইনের কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়। পাইপলাইন নির্মিত হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারত থেকে পার্বতীপুর রেলহেড পিওএল ডিপোতে জ্বালানি তেল (ডিজেল) চলে আসবে। আর এখান থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬ জেলায় তা সরবরাহ করা হবে। এতে করে একদিকে সময় লাগবে কম, অপরদিকে পরিবহন ব্যয় ও সিস্টেমলস অনেক কমে যাবে। কৃষি কাজে বিপ্লব ঘটবে। উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও নীলফামারী জেলায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। পার্বতীপুরের রেলওয়ে হেড ডিপো পরিদর্শনে এসে গত বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান।

Development by: webnewsdesign.com