পাঁচ কারণে টাকা পাচার-৪০ শতাংশই যায় ৩৬টি উন্নত দেশে,পরিস্থিতির পদক্ষেপ নেই

রবিবার, ০৮ মার্চ ২০২০ | ৮:৩৫ অপরাহ্ণ

পাঁচ কারণে টাকা পাচার-৪০ শতাংশই যায় ৩৬টি উন্নত দেশে,পরিস্থিতির পদক্ষেপ নেই

পাঁচ কারণে টাকা পাচার:৪০ শতাংশই যায় ৩৬টি উন্নত দেশে, পরিস্থিতির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেইবাংলাদেশ থেকে মূলত পাঁচটি কারণে টাকা পাচার হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, আইনের শাসনের ঘাটতি এবং বেপরোয়া দুর্নীতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, টাকা পাচারের ক্ষেত্রে মোটা দাগে এসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পরপর ৩টি সংস্থার রিপোর্টেই বাংলাদেশ থেকে ভয়াবহ আকারে টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপার। এসব প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকার বড় অংশই যায় উন্নত ৩৬ দেশে। তবে পাচার বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও সরকারের দাবি, টাকা পাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারা এ কাজ সঠিকভাবে করছে কিনা- সে ব্যাপারে আমরাও নজর রাখছি। তিনি বলেন. মানি লন্ডারিংয়ের একটি চ্যাপ্টার নিয়ে কাজ করছে দুদক। যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে এবং অর্থপাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অনুসন্ধান চলমান।
সর্বশেষ জিএফআই মঙ্গলবার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে টাকা পাচারের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে ২০১৫ সালে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য (আমদানি-রফতানি) হয়েছে, তার প্রায় ২০ শতাংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। যা প্রায় তিনটি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান। আর গত সাত বছরে দেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যা চলতি (২০১৯-২০২০) জাতীয় বাজেটের প্রায় কাছাকাছি এবং দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দ্বিগুণ। তবে তিন বছর আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এ ধরনের কোনো তথ্য দিচ্ছে না বাংলাদেশ।
এ ব্যাপারে জিএফআইর সিনিয়র ইকোনমিস্ট রিক রাউডেন জানান, অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ জাতিসংঘে নিয়মিতভাবে বার্ষিক আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের তথ্য দিয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৪, ১৬ এবং ১৭ সালের কোনো তথ্য দেয়নি। ফলে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যায়নি। যে কারণে ২০১৫ সালের তথ্য দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে কেবল ৩৬ উন্নত দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির তথ্যের অসঙ্গতি ৪৬০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তথ্যটি নতুন নয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। তাদের মতে, টাকা পাচার রোধে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে টাকা পাচার রোধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। তবে সরকার বলছে, তারা পাচার রোধে কাজ করছে এবং ইতিমধ্যে বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, জিএফআই একেক সময় একেক রিপোর্ট দেয়। একবার রিপোর্ট দিল বেশি টাকা পাচার হচ্ছে। পরের আবার দিল যে টাকা পাচার হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি আসছে। তবে অর্থপাচার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি তা যাচাই করে দেখব।
তিনি বলেন, সাধারণত আমদানি-রফতানির আড়ালেই অর্থপাচার হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে আমরাও কয়েকটি ঘটনা চিহ্নিত করেছি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়েছি। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তার মতে, সারাবিশ্বে বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে এখন সবাই সতর্ক। আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
অন্যদিকে তথ্য গোপনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ তারা জিএএফআই কখনই আমাদের কাছ থেকে তথ্য নেয় না। তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তথ্য নিয়ে কাজ করে।
বিশ্লেষকরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টাকা পাচারের এক ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। আমদানির নামে এলসি বিল পরিশোধ করছে, কিন্তু কোনো পণ্যই দেশে আসছে না। প্রভাবশালী মহল পণ্য জাহাজীকরণের কাগজ জাল করে এলসিকৃত পণ্যের পুরো টাকাই তুলে নিয়ে বিদেশে রেখে দিচ্ছেন। এ ধরনের বেশ কিছু কেস স্টাডি পাওয়া গেছে। এগুলো পর্যালোচনার পর পাচার বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ থেকে প্রতি বছর যে টাকা পাচার হয়, এটি তার আংশিক চিত্র। পুরোটা চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ মোট বাণিজ্যের ৩৬ শতাংশই বিদেশে পাচার হয়। তার মতে, অর্থপাচারের অনেক কারণ রয়েছে। আর এগুলো বন্ধের জন্য সরকারের সক্ষমতার অভাব হতে পারে।

অথবা সরকারের সদিচ্ছা নেই। তিনি বলেন, মূলত দুর্নীতি হচ্ছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে কিন্তু বিচার হচ্ছে না এ কারণেই টাকা পাচার বাড়ছে। দুর্নীতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দৃষ্টান্ত নেই। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগতভাবে দুর্বল হচ্ছে। আইনের শাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কিছু লোক বিদেশে টাকা নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা পাচার হতে পারে। এছাড়া বিনিয়োগে মন্দা কারণে ব্যবসায়ীদের টাকা বিদেশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, কারণ যাই হোক, টাকা পাচার হওয়া দেশের জন্য সুখবর নয়। তার মতে, সরকারের দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।

টাকা ফিরিয়ে আনা এবং জড়িতদের কঠোর শান্তি নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এনবিআর এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে পাচার রোধে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত জিএফআইর রিপোর্টে বলা হয়, শুধু ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার পাচার রয়েছে।

স্থানীয় মুদ্রায় যা ৯৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর ৭ বছরে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ২৭০ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে প্রকাশিত সুইস ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) পানামা এবং প্যারাডাইস পেপারসে এ পর্যন্ত অর্থপাচারকারী হিসেবে ৮২ জন ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করেছে।

কিন্তু কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়নি বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আমদানির নামে এলসি খুলে বিল পরিশোধ করছে, কিন্তু কোনো পণ্যই দেশে আসছে না। এছাড়া রয়েছে আমদানিতে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানি মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি টাকা পাচারের আরও একটি বড় মাধ্যম হয়ে দেখা দিয়েছে রেমিটেন্স।
একটি চক্র বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংগ্রহ করে তা বিদেশেই রেখে দেয়। আর এ দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় এর দায় শোধ করা হয়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ অনুযায়ী এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না। ওইগুলোও পাচার হয়ে বিদেশের কোনো ব্যাংকে রাখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, টাকা পাচারের প্রধান কারণ মূলত দুর্নীতি। কারণ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা দেশে রাখা সম্ভব নয়। এগুলো হল- পাচার হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যবসায়ীর যদি অনেক টাকা হয়, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুযোগ না থাকে তাহলে বিদেশে পাচার করে। তৃতীয় দেশে ভয়ভীতির কারণে অনেক টাকা নিয়ে যায়। তবে কারণ যাহোক পাচার রোধে আমাদের সাফল্য নেই। তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট আছে। তারা এ বিষয়ে কী করছে, তা আমাদের জানা নেই।
সূত্র জানায়, দেশে-বিদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে তথ্যের আদান-প্রদান করতে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১৫৯টি দেশ ওই গ্রুপের সদস্য। বাংলাদেশ এই গ্রুপের সদস্য হওয়ায় এখন সবগুলো দেশ থেকে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বা টাকা পাচার বিষয়ক যে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
এদিকে টাকা পাচার রোধে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশে অর্থপাচার ও সম্পদ গচ্ছিত রাখা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে অপরাধ দমনে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, পাচার রোধ ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের সদস্য।

আরও ১৫৯টি দেশ এই গ্রুপে রয়েছে। এদের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় হয়।
পাচারে শীর্ষ দেশ : জিএফআইর প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৭ সালে বিশ্বে অর্থপাচারে প্রথম অবস্থানে চীন। এ সময়ে দেশটি থেকে ৪৮২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়া থেকে পাচার হয়েছে ৯২ বিলিয়ন ডলার, এরপর মেক্সিকো ৮১ বিলিয়ন, ভারত ৭৮ বিলিয়ন, মালয়েশিয়া ৬৪ বিলিয়ন, পোল্যান্ড ৫৩ বিলিয়ন, ব্রাজিল ৫৩ বিলিয়ন, থাইল্যান্ড ৫০, সংযুক্ত আবর আমিরাত ৪৫ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ৪৩ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে।
যেভাবে জিএফআই’র রিপোর্ট : মূলত বিভিন্ন দেশ জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যে তথ্য দেয়, সেটি বিশ্লেষণ করে জিএফআই। যেমন জাতিসংঘে দেয়া বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া তথ্যে দেখা গেল, তারা বাংলাদেশ থেকে তিন বিলিয়ন ডলার পণ্য কিনেছে। এই দুই দেশের আমদানি-রফতানির যে পার্থক্য, এটিকে পাচার হিসেবে বিবেচনা করে জিএফআই। এক্ষেত্রে ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জাতিসংঘে কোনো তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ।

 

 

 

 

 

Development by: webnewsdesign.com