ভিডিও গেইম খেলেও ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব

বৃহস্পতিবার, ০৫ মার্চ ২০২০ | ৮:৪৩ অপরাহ্ণ

ভিডিও গেইম খেলেও ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব

বিশ্বের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি এখন এত বড় যে এটি চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত এই দুই ব্যবসাকে যদি এক করা হয়, তাকেও ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু তারপরও গেমিং এ যাদের বিশেষ দক্ষতা, তাদের অনেকেই তাদের সিভি বা জীবন বৃত্তান্তে এটি উল্লেখ করতে চাইবেন না।তবে গেমিং এর দক্ষতাও যে একটা বড় যোগ্যতা, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এটা বুঝতে পারছে এবং এটিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।বছরের পর বছর গেম খেলে আর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে যে দক্ষতা তৈরি হয়, তাকে যে কাজে কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগানো সম্ভব, সে ব্যাপারে নিশ্চিত গেম একাডেমী।তারা বলছে, এর পক্ষে নিরেট তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে আছে।আপনি কি পোর্টালের মতো পাজল গেম বা ডিফেন্স গ্রিডের মতো টাওয়ার ডিফেন্স গেম পছন্দ করেন? যারা তথ্য প্রযুক্তি খাতে কাজ করেন, এগুলো তাদের অনেকের প্রিয় গেম।খবর বিবিসি বাংলার।


কিন্তু যদি আপনার পছন্দের গেমের তালিকায় থাকে সিভিলাইজেশন, টোটাল ওয়ার বা এক্স কম, যেখানে কৌশল এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে ম্যানেজারের মতো পদের জন্যই হয়তো আপনি বেশি উপযুক্ত।গেম একাডেমীর আইডিয়াটা খুবই সহজ। যারা গেম খেলছেন, তাদের অনলাইন প্রোফাইল বিশ্লেষণ করলেই জানা যাবে তাদের কার দক্ষতা কিসে। এরপর তাদের সে বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব দক্ষতা আরও বাড়ানো যাবে।গেমিং এর দক্ষতা যে অন্য কাজে লাগানো যায়, এ নিয়ে সচেতনতাও বাড়ছে। এমনকি সামরিক বাহিনীতেও এখন গেমারদের নেয়া হচ্ছে।ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, তথ্য সংগ্রহ করা, দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া এবং শান্ত থেকে সমন্বিতভাবে কাজ করা- এগুলো কিন্তু যারা ভালো গেম খেলে, তাদের বৈশিষ্ট্য। আমরা বিমান বাহিনীতে যে ধরণের লোক খুঁজি, তাদের বেলাতেও এই দক্ষতাই দেখা হয়। কাজেই গেমিং এর মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতা কোন কোন ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগবে।হেইজ রিক্রুটমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রায়ান গার্ডনারের মতে, গেমারদের অনেক ধরণের দক্ষতা আছে যা তারা পেশাগত কাজে লাগাতে পারে।

যেমন টিমওয়ার্ক, প্রবলেম সলভিং বা স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং।কিন্তু তার মানে কি এই যে কোন গেমে আপনি শীর্ষ একশো জনের মধ্যে জায়গা করে নিতে পারলে সেটা আপনার সিভি-তে লিখতে হবে?মিস্টার গার্ডনারের মতে, আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করছেন, সেটার জন্য এই গেমিং এর দক্ষতা কিভাবে কাজে লাগানো যাবে, সেটাই হচ্ছে আসল কথা।দু বছর আগে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, গেমিং ছাত্রদের আরও সফল হতে সাহায্য করে।তবে এই সমীক্ষার পরও গেমিং এর ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী সেভাবে পাল্টায়নি, বলছেন ড: ম্যাথিউ বার, যিনি এই গবেষণা চালিয়েছিলেন।এ বিষয়ে তিনি এখন একটি বই লিখছেন।তিনি তার বইতে উল্লেখ করেন, গেমিংকে এখনো হীন চোখেই দেখা হয়, কেউ যদি বলে যে সে প্রচণ্ড রকমের গেমে আসক্ত, সেটা যেন তার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট করবে। কিন্তু কেউ যদি বলতে পারে যে সে অনলাইনে গেম খেলার সময় একটি টিমের নেতৃত্ব দিয়েছে, সেটি কিন্তু কোন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তবে কেউ যদি কেবল খেলার জন্যই খেলে যায় এবং যেসব দক্ষতা দিয়ে গেম খেলতে হয় সেগুলো নিয়ে না ভাবে, সেটি তার ক্যারিয়ারের জন্য খুব সহায়ক নাও হতে পারে।গেম একাডেমী তাই চেষ্টা করছে কীভাবে এরকম ‘ক্যাজুয়াল’ গেমারদের আরও সচেতন করে তোলা যায়, যাতে করে তারা বিশ্নেষণী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ায়।কর্মজীবনে সফল হয়েছেন, এমন অনেকে মনে করে, গেমিং এর অভিজ্ঞতা তাদের সাহায্য করেছে।


ম্যাথিউস রিকি এদের একজন। তিনি তো দাবি করছেন, কেউ যদি অনলাইনে ইভ (EVE) গেম খেলতে পারে, তার মানে ইতোমধ্যে সে আসলে এমবিএর সমতুল্য ডিগ্রি অর্জন করে ফেলেছে।মিস্টার রিকি অনলাইনে এমন এক গেম খেলতেন, যেখানে শত শত গেমারের নেতৃত্ব দিতেন। একসময় তিনি উপলব্ধি করলেন, এই দক্ষতাকে তিনি ব্যবসার কাজে লাগাতে পারেন। তিনি এখন জেনটেক নামে একটি কোম্পানি চালান। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্রান্ডকে কানাডার বাজারে ঢুকতে সাহায্য করেন।ডিজিটাল বিজনেস কনসালট্যান্ট মিয়া বেনেট বলেন, গেমিং কে এখনো টিনএজারদের নেশা বলে ধরে নেয়া হয়, মনে করা হয় এটা সময়ের অপচয়। কিন্তু আসলে এখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আগে থেকে কোন কিছুর আঁচ করতে পারা এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে পারা, এমন অনেক দক্ষতার ব্যাপার জড়িত।

Development by: webnewsdesign.com