রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না দাবি ব্যবসায়ীদের

বৃহস্পতিবার, ০৫ মার্চ ২০২০ | ১২:৫০ অপরাহ্ণ

রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না দাবি ব্যবসায়ীদের

রমজানে যেসব নিত্যপণ্যের বাড়তি চাহিদা থাকে সেগুলোর সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমান মজুদ পণ্যের সঙ্গে শিগগিরই আমদানিপণ্যও যোগ হবে। ফলে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ বাড়তি চাহিদার এসব পণ্যের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। গতকাল বুধবার মৌলভীবাজার, কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি-খুচরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের কার্যকর তদারকি থাকলে এবং আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট তৈরি না করলে এবার পণ্যের দাম বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা করোনাভাইরাসের কারণে নির্দিষ্ট এসব পণ্য অনেক দেশ আমদানি বন্ধ রেখেছে। এতে পণ্যের ভোগ কমে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতন হওয়া এবং পণ্য মূল্য বেড়ে যাওয়ার আতঙ্ক তৈরি না করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তাঁরা বলছেন, অনেক সময় ভোক্তারা আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য কিনে ফেলে, যা বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি করে। এই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তবে ব্যবসায়ীদের এই আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না ভোক্তারা। তাঁরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সব সময়ই এমন কথা বলেন; কিন্তু পরে ঠিকই দাম বেড়ে যায়। তাই সরকারের কার্যকর মনিটরিং চাইছেন তাঁরাও।

জানা যায়, রমজানে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা ও খেজুর—এই চারটি পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এর বাইরে মসুর ডাল, বেসন, পেঁয়াজ, ময়দাসহ কয়েকটি পণ্যের চাহিদাও কিছুটা বাড়ে। এর মধ্যে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে সয়াবিন, পামসহ ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টন। যার ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। রোজায় এ চাহিদা ২০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পায়। সে হিসেবে পণ্যটি আমদানিও করেন ব্যবসায়ীরা।

ভোজ্য তেলের বড় আমদানিকারক হলো চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ চার-পাঁচটি দেশ। আর বড় রপ্তানিকারক দেশ হলো মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনাসহ আরো কয়েকটি দেশ। এবার ওই সব দেশ করোনাভাইরাস সংকটে পড়ায় পর্যাপ্ত ভোজ্য তেল আমদানি করতে পারেনি। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের মজুদ বেড়ে গেছে। তাই দামও কিছুটা কম রয়েছে। রমজানেও বাজার পরিস্থিতি এমনই থাকবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল মৌলভীবাজারে মণপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ১৫০ থেকে তিন হাজার ১৬৫ টাকার মধ্যে। আর পাম সুপার দুই হাজার ৬৩৫ টাকা এবং পাম অয়েল দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

একই অবস্থা চিনির ক্ষেত্রেও। বছরব্যাপী দেশে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে অন্য মাসের তুলনায় রমজানে চাহিদার কিছুটা বেশি থাকে পণ্যটির। চিনির মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়। তবে চিনির সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মৌলভীবাজারে সাদা চিনির মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২৩০ টাকা। আর দেশি লাল চিনি মিলগেটের দর প্রতি কেজি ৬০ টাকা।

এ বিষয়ে কথা হয় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজী মো. আবুল হাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। আমদানিকারকরাও আমাদের জানিয়েছেন যে রোজা উপলক্ষে পণ্য আমদানি হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু পণ্যের দাম এরই মধ্যে কমেছে বলেও দাবি এই ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, তেল আর চিনির দাম এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা কম। দেশে এটি সমন্বয় হলে দাম কমতে পারে বলেও তিনি জানান। বাজারে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের জোরালো তদারকির দাবি করেন তিনি।

আবুল হাশেম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের স্টকে বড় কোনো সমস্যা না হলে কিংবা দেশে সিন্ডিকেট তৈরি না হলে রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে না। কেননা বাড়তি চাহিদার পণ্য আমদানি করা হচ্ছে।

গতকাল পর্যন্ত পাইকারি বাজারে মসুর ডাল, ছোলা, বেসন, ময়দা, খেজুর ও পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম আগের মতোই রয়েছে। রাজধানীর পাইকারি বাজারে আমদানি করা মোটা দানার মসুর ডাল ২৫ কেজির বস্তা ১৩৫০-১৩৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে, ছোট দানার ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায়। এ ছাড়া ময়দা ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৩৫০-১৩৭০ টাকায়। বেসন ৩০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১০৫০ টাকা, ছোলা ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৮০০-১৮৫০ টাকা বা ৭৩-৭৪ টাকা কেজি।

এর বাইরে খেজুরের দাম রপ্তানিকারক দেশগুলো সাধারণত রমজান উপলক্ষে বাড়ায় না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদি বাড়ে তবে বুঝতে হবে আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে। অথবা বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে খেজুর আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভালোমানের খেজুর ৫০০-৬০০ টাকা, মাঝারিমানের খেজুর ৩৫০-৪৫০ টাকা। অন্যদিকে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি বাধা তুলে নেওয়ার পর দাম কমতে শুরু করেছে। খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি।

তবে রোজায় পণ্যের দাম বাড়বে না, এটি বিশ্বাস করতে নারাজ মানিকনগরের মহিউদ্দিন। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী। তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও এমন কথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা ২০০ টাকায় পেঁয়াজ খেয়েছি। ওই সময়ও স্টক রয়েছে বলে জানিয়েছিল সরকার। এখনো দাম বেশি।’

Development by: webnewsdesign.com