যৌন নিপিড়ক জবি শিক্ষক প্রামণিকের অবস্থান বহাল: পদন্নোতি স্থগিত

মঙ্গলবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৯:২৩ অপরাহ্ণ

যৌন নিপিড়ক জবি শিক্ষক প্রামণিকের অবস্থান বহাল: পদন্নোতি স্থগিত

যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হালিম প্রামানিককে শাস্তির আওতায় এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শাস্তির মধ্যে রয়েছে পদোন্নতি স্থগিত ৪ বছর থেকে বাড়িয়ে ৮ বছর এবং ১০ বছর সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও নিজ কোর্স ছাড়া পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে পারবেন না।

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন সভায় থাকা একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। তবে পদন্নোতি স্থগিতের ৮ বছরের ৫ বছর শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে।

তবে নাম না প্রকাশের শর্তে সিন্ডিকেটে অংশ নেওয়া এক সদস্য জানান, তদন্ত রিভিউ কমিটি বক্তব্য অপরিষ্কার থাকায় পদে বহাল করা হয়েছে প্রামণিককে। তদন্ত রিভিউ কমিটির দাবি, অভিযোগ সন্দেহতীত ভাবে প্রমাণ হয়নি আবার এধরণের অভিযোগ অমূলকও নয়। তবে রিভিউ কমিটির এমন অস্পষ্ট বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।

 

এ বিষয়ে প্রথম তদন্ত কমিটির প্রধান ড. হেলেনা ফেরদৌসী বলেন, আমাদের তদন্ত কমিটিতে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছিলো। কমিটির সদস্যরা সবাই এবিষয়ে একমত ছিলাম। তবে এরকম যদি হতে থাকে আমাদের শিক্ষার্থীরা কখন বিচার পাবে না।

দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ড.মনিরুজ্জামান এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সিদ্ধান্তের সারাংশ না আসা পর্যন্ত আমি এটা নিয়ে কথা বলবো না।

রিভিউ ও তৃতীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ড. শওকত জাহাঙ্গীরও এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী দুই কমিটির বক্তব্যে ভিন্নতা ছিলো তাই আমাদের কমিটি করা হয়। আমরা আমাদের বক্তব্য সিন্ডিকেটকে জানিয়েছি। যেহেতু সিন্ডিকেট এবিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, আমাদের কিছু বলা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে নাট্যকলা বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান শামস শাহরিয়ার কবি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ঐ ছাত্রী বলেন, এধরণের বিচার একেবারেই সন্তোষজনক না। এরআগেও একটা বিচারে তাকে পদোন্নতি স্থগিত করা হয়। শুধু আমরা দুইজন না আরও অনেক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এতকিছুর পরও এমন শাস্তি মেনে নেওয়া যায় না।

যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নাট্যকলা বিভাগের এক ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিতির নম্বরের বিষয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম প্রামানিকের কাছে গেলে তিনি ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী।

শাস্তির বিষয়ে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, এটা নিয়েতো সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমার আলাদা মন্তব্যের কিছু নেই।

রিভিউ কমিটির বক্তব্যের অস্পষ্টতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিভিউ কমিটি তার বক্তব্য দিয়েছে, সিন্ডিকেটের বিজ্ঞ সদস্যরা তারা তাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবদুল হালিম প্রামাণিকের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তার শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করেন। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ঐ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে অধ্যাপক আবদুল হালিমকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিরস্কার করে। একই সঙ্গে দ্রুত ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

 

অভিযোগটি দুই দফা তদন্তের পর ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল ৭৭ তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে তিরস্কার ও দুই বছরের জন্য পদোন্নতি পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী ছাত্রী এমন শাস্তিতে অসন্তুষ্ট জানিয়ে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিলে ফের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।অপরাধের সঙ্গে ওই শাস্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ওই বছরের ৩০ এপ্রিল ভুক্তভোগী ছাত্রী আবার ঘটনাটি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭৭তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত বাতিল করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

অভিযোগটি দুই দফা তদন্তের পর ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল ৭৭ তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে তিরস্কার ও দুই বছরের জন্য পদোন্নতি পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী ছাত্রী এমন শাস্তিতে অসন্তুষ্ট জানিয়ে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিলে ফের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।অপরাধের সঙ্গে ওই শাস্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ওই বছরের ৩০ এপ্রিল ভুক্তভোগী ছাত্রী আবার ঘটনাটি তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭৭ তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত বাতিল করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

Development by: webnewsdesign.com