পটুয়াখালীর বাউফলে আইন-শৃংখলার চরম অবনিত

রবিবার, ০৯ আগস্ট ২০২০ | ৭:১৫ অপরাহ্ণ

পটুয়াখালীর বাউফলে আইন-শৃংখলার চরম অবনিত

সাম্প্রতিক সময়ে পটুয়াখালীর বাউফলে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। প্রায়শ:ই হচ্ছে চুরি, ডাকাতি, খুন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। আইন-শৃংখলার অবনতির জন্য বাউফল থানা পুলিশকেই দায়ি করছেন ভুক্তভোগি পরিবারগুলো।

তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ মে দুপুরে বাউফল থানার সামনে তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে তাপস নামের এক যুবলীগ কর্মী ছুরিকাঘাতের শিকার হয়ে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ওই দিনই মারা যায়। এসময় বাউফল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, ওসি (তদন্ত) আল মামুনসহ এক ডজন এসআই, এএসআইসহ ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাদের চোখের সামনে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তারা নিরব ভূমিকায় ছিলেন।

প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, ওই সময় পুলিশ ব্যবস্থা নিলে খুনের ঘটনা এড়ানো যেত। গত ২ আগস্ট প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয় কেশবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি রুমন তালুকদার(৩৪) ও তার চাচাতো ভাই যুবলগি কর্মী ইশাত তালুকদার(২৪)। ওই ঘটনার দুই দিন আগে ৩১ জুলাই কেশবপুর বাজারে দুই পক্ষের হামলায় নিহত রুমন তালুকদারে মেঝ ভাই হাফেজ উদ্দিন পিন্টু ও মফিজ উদ্দিন মিন্টুসহ ১০-১২ আহত হয়। ৩১ জুলাইয়ের ঘটনার পর ওই দিনই সন্ধায় কেশবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেশবপুর কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন পিকু বাউফল থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ সে অভিযোগ গ্রহণ করেননি।

 

সালেহ উদ্দিন পিকু অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ওই সময় অভিযোগ আমলে নিলে হয়তো তার দুই ভাই খুন হতো না। বাউফল থানা পুলিশের এহেন রহস্যজনক ভুমিকা নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং তারা থানার উর্ধতন কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করেছেন। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারণে এখনো তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ২৪ মে থানার সামনে দিনে দুপুরে যুবলীগ কর্মী তাপস হত্যা সম্পর্কে নিহত তাপসের বড় ভাই পঙ্কজ দাস অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের সামনে তার ভাইকে ছুরিকাঘাত করলেও পুলিশ না দেখার ভান করে উল্টো আমাদের লোকজনকেই পিটিয়ে আহত করেছে। পুলিশের ওই ভূমিকা রহস্যজনক।

বাউফলের তেুঁতুলিয়া নদীতে অহরহ ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও প্রকৃত ডাকাতদের আটকে পুলিশের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ বাউফলের কালাইয়া বন্দরে নৌপথ পাহারার জন্য একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ঘরে চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে। বাউফল পৌর এলাকা, কেশবপুর, নাজিরপুর ও কাছিপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় দুই ডজন চুরি সংর্ঘটিত হয়েছে। ওই সব এলাকার মানুষ এখন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এসব ঘটনা পুলিশকে অবহিত করা হলেও কোন ধরণের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছেনা। গত ৫ আগস্ট কাছিপাড়া বাজারে এক রাতে ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৩টি ফ্লাটে চুরি সংর্ঘটিত হয়েছে। ঈদুল আজহার আগের দিন পৌর শহরের জনৈক আবু বক্কর নামের এক ব্যক্তির গরু চুরি হয়েছে। তিনি থানায় অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ নেয়া হয়নি।

কালাইয়া ইউপির দবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষরা তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করতে গেলে তার কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করা হয়। দেড় হাজার টাকা দিলেও তার মামলা এখনো রুজু হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার কোন মানুষ থানায় আইনি সহায়তা নিতে আসলে থানার জনৈক বার্তা অপারেটর সে তথ্য অর্থের বিনিময়ে প্রতিপক্ষকে জানিয়ে দেন। অপরদিকে বাউফল থানার ওসি সহসা ফোন রিসিপ করেননা বলেও অভিযোগ করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এদিকে উপজেলার কালাইয়া বন্দরে পুলিশের জ্ঞাতসারেই মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশ নিরিহ যুবকদের পকেটে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে মোটা অংকের বিনিময়ে সেটা আবার রফাদফা করছেন। একাজে তাদের সোর্স ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি আসার পর বাউফরে কোন চুরি,ডাকাতি কিংবা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তাপস হত্যাকান্ড সম্পর্কে বলেন, উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে পুলিশের অজান্তেই এ ঘটনা ঘটেছে। রোমান ও ইশাত হত্যাকান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, উভয় পক্ষের লোকজনই মিল মিমাংসা করা হবে বলে সময় ক্ষেপণ করেছেন। এছাড়া ওই সময় আমি করোনাক্রান্ত হয়ে আইসেলেশনে ছিলাম। এরপরও খবর নিয়ে জানতে পারি থানায় আসা অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

বাউফল সার্কেলের সিনিয়র পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের যান মালের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পুলিশের। এসব বিষয়ে পুলিশের কোন গাফেলতি বরদাস্ত করা হবেনা ।

বাউফলের এমপি আ.স.ম. ফিরোজ বাউফলে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে স্বীকার করে বলেন, সম্প্রতি বাউফলে ঘটে যাওয়া একাধিক খুন, ডাকাতি ও চুরির ঘটনায় পুলিশ দায় এরাতে পারেন না। এরকমটা কখনোই বাউফলে ছিলনা। ঠিক কী কারণে এবং কাদের প্ররোচণায় এগুলো ঘটছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি এবং পুলিশকেও খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথেও আলোচনা করা হবে।

Development by: webnewsdesign.com