নড়াইলের পল্লীতে ১২ টি ইউনিয়নে ভয়ংকর হয়ে উঠেেছ কিশোর গ্যাং’ কালচার!

শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০২০ | ১০:২৮ অপরাহ্ণ

নড়াইলের পল্লীতে ১২ টি ইউনিয়নে ভয়ংকর হয়ে উঠেেছ কিশোর গ্যাং’ কালচার!

বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচনার বিষয় ‘কিশোর গ্যাং’ কালচার। নড়াইলের লোহাগড়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে ভয়ংকর হয়ে উঠেেছ উঠতি বয়সী তরুনেরা। স্কুল-কলজের গন্ডি পার হওয়ার আগেই কিশোরদের একটা অংশ বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় তারা। উদ্ভট নাম দিয়ে খোলা হয়েছে নানা গ্রুপ। এসব দলের অধিকাংশ তরুণের বয়স ১৪ থাকে ১৮ বছররে মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত- সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে।

নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোরেরা। তাদের আচরণে পবিবর্তন হচ্ছে। কিশোর বয়সে হিরোইজম ভাব দেখানোর প্রবণতা বাড়ছে। আবার কিশোরদের রাজনতৈকিভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনরে ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে পশ্চিমা সংস্কৃতি ইচ্ছামতো তাদের আয়ত্তে চলে যাওয়ায় কিশোরদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরদের মধ্যইে ‘অ্যাডভঞ্চোর ফিলিংস্ বা ‘হিরোইজম’ ভাব বেশি দেখা যায়।

কিশোর বয়সে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তাকে অপরাধী হয়ে উঠতে সহায়তা করছে। কিশোর বয়সে ইতিবাচক র্চচার দিকে না গিয়ে, নেতিবাচক র্চচার দিকে চলে যায়। আবার যখন তারা দেখে যে অপরাধ যারা করছে, তারা সমাজে বেশি লাভবান হচ্ছে,সেটা কিশোরেরা অনুসরণ করছে। তাদের ওপর পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গরিবও ও ধনী দুই শ্রেণির পরিবারের কিশোরদের মধ্যেই এই গ্যাং কালচারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

 

সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা গেছে, সাধারণত কিশোর গ্যাং দলের সদস্যরা সকালে এবং বিকালে জোটবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে থাকে। এদের সকলেরই হাতে থাকে দামি মোবাইল ফোন। স্কুলের সামনে,চায়ের দোকানে,বাজারের গলিতে ও ফাঁকা মাঠে আড্ডার পাশাপাশি মোবাইলে গেম খেলাসহ,বিভিন্ন পর্ণসাইটে ঢু মারে।

এছাড়া,স্কুল ও কলেজগামী মেয়েদের উত্যক্ত করে থাকে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নামি-দামি মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত গতিতে পাড়া মহল্লায় চষে বেড়ায়। এদের চলাফেরায় সাধারণ পথচারীরা ভিত সন্ত্রস্ত থাকে,কখন যেন তাদের ওপর চড়াও হয়। কেউ কিছু বললেই তাদেরকে অপমানিত হতে হয়। অনেকে মান সম্মানের ভয়ে চেপে যায়। কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া চলাফেরায় অনভস্ত এ জনপদের মানুষজন। অবাধ চলাফেরার পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। এ সংক্রান্ত অভিযোগও কম নয়।

অপরাধ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অপরাধে এ কিশোর গ্যাংয়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। সোমবার এলাকার আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে শহরের খলিশাখালি গ্রামের মশিয়ার, লাভলু ,সোহেল ,ফয়সাল তালুকদার, আমিনুর, সজিব, ইমন, আলম, আরমানসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র ছ্যানদা, রামদা,চাপাতি নিয়ে জলিলের গতি পথ রোধ করে। এর পর দূর্বৃত্তরা জলিলকে এলোপাথাড়ি ভাবে কুপিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে এবং তার শরীর থেকে ডান হাত ও বাম পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, এটা সামাজিক অবক্ষয়রে ফল। এছাড়া পিতা-মাতা সন্তানদের বিভিন্ন অযৌক্তিক আবদার পূরণে বাধ্য হচ্ছে-এটাও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারন। এই কিশোরদের সঠিক পথের অনুসারী করে তুলতে হবে।

সরকারী লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম হায়াতুজ্জামান জানান, সমাজ পরিবর্তনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসতে হবে। সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি,অভিভাবক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। গঠনমূলক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত করা গেলে বিপথগামী কিশোরদের সুপথে আনা সম্ভব বলে তিনি জানান।

 

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, অতি সম্প্রতি দেশে কিশোর গ্যাং কালচারের আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পিতা-মাতার সচেতনতা,আন্তরিকতাই পারে সন্তানদের এ অপরাধ থেকে দূরে রাখতে।

Development by: webnewsdesign.com