সীমান্তে চোরাচালন প্রতিরোধে বিজিবি’র টহলে গ্রামবাসী

মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই ২০২০ | ৮:১০ অপরাহ্ণ

সীমান্তে চোরাচালন প্রতিরোধে বিজিবি’র টহলে গ্রামবাসী

আর কয়েক দিন পর ঈদুল আযহা। ভারত থেকে আসতে পারে গরু। সে সঙ্গে আসতে পারে মাদকও। এমন পরিস্থিতিতে রাত জেগে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন রাজশাহীর একটি গ্রামের বাসিন্দারা। পাচার ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে তারাও পালা করে এই কাজ করছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলার মধ্যেই গ্রামটি চরখিদিরপুর রাজশাহী শহরের দক্ষিণে, পদ্মা নদীর ওপারে। চরখিদিরপুর গ্রামের পাশেই ভারত। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া নেই। তাই এখান দিয়েই চোরাচালানের ঝুঁকি বেশি। সে কারণেই গ্রামবাসী সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন।

গ্রামটিতেই বিজিবির চরখানপুর সীমান্ত ফাঁড়ি (বিওপি)। সীমান্তে সতর্ক নজর রাখেন বিজিবি সদস্যরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গ্রামবাসী। সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে গ্রামের ১৬ জন ব্যক্তিকে নিয়ে দুটি দল গঠন করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৮ জন সীমান্ত পাহারা দেন। তারা ৪ জন করে ভাগ হয়ে সীমান্তে নজর রাখেন। একইভাবে অপর ৮ জন রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত সীমান্ত পাহারা দেন। বিজিবি’র সঙ্গে সমন্বয় করেই তারা এই কাজ করছেন। রাতে যখন গ্রামের লোকজন সীমান্ত পাহারা থাকেন তখন তাদের কাছে থাকে টর্চ লাইট আর লাঠি।

 

কখনও কোন এলাকায় সন্দেহজনক কিছু মনে হলে মুঠোফোনে খবর দেন বিজিবিকে। তারা গিয়ে পরিস্থিতি দেখেন। গ্রামবাসী বলছেন, বিজিবির সঙ্গে এভাবে সীমান্ত পাহারা দেয়ায় এ পথে কোন মাদক আসে না। কোরবানি উপলক্ষে গরুও আসছে না। আর বিজিবি বলছে, গ্রামবাসীর স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে দুর্গম এই চরে তাদের কাজও অনেক সহজ হয়ে গেছে। এভাবে প্রত্যেক এলাকায় গ্রামবাসীর অংশগ্রহণ থাকলে চোরাচালান বন্ধ করা অনেক সহজ হতো। তাহলে সীমান্ত হত্যাও বন্ধ হতো।

চরখিদিরপুরের বাসিন্দা পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য কোহিনুর বেগমের। তিনি জানান, তাদের গ্রাম এখনও করোনামুক্ত। কিন্তু ভারত থেকে যদি গরু আসে তাহলে করোনারও আসার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিজিবি তাদের বুঝিয়েছে যে নিজেদের গ্রাম নিজেদেরকেই নিরাপদ রাখতে হবে। তাই দুটি দল গঠন করে তাদের গ্রামের পুরুষরা ৯ জুলাই থেকে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন।

রাতে সীমান্ত পাহারায় থাকেন গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, চরে চাষবাস করি। গরু-ছাগল পালন করি। সামনে কোরবানি ঈদ। ভারত থেকে যদি গরু আসে তাহলে বাংলাদেশের গরুর দাম কমে যাবে। আমার যে গরুর দাম ৮০ হাজার, সেটা তখন ৫০ হাজারে বিক্রি করতে হবে। আমিই লোকসানে পড়ব। তাই ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকা দরকার। সেই চিন্তা থেকেই আমি সীমান্ত পাহারা দিচ্ছি।

বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমাদের চারটি বিওপি রয়েছে। সবখানেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একটি করে কমিটি গঠন করেছেন। আমাদের প্রয়োজন হলেই সেই কমিটির সদস্যরা এভাবে সীমান্ত পাহারায় আসেন।

 

তিনি বলেন, কোনকিছুর বিনিময়ে নয়, গ্রামবাসী স্বতস্ফূর্তভাবেই এগিয়ে আসেন। বিজিবি দেখা যাচ্ছে সীমান্তের একপাশে গিয়েছে, গ্রামবাসী অন্য পাশে নজর রেখেছেন। এভাবেই আমরা কাজ করছি। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখেই আমরা এভাবে কাজ করছি। এতে ভাল ফল মিলছে।

Development by: webnewsdesign.com