করোনায় হবিগঞ্জ জেলায় ৪ মাসে ৩২টি খুন

বৃহস্পতিবার, ০৯ জুলাই ২০২০ | ৭:৫২ অপরাহ্ণ

করোনায় হবিগঞ্জ জেলায় ৪ মাসে ৩২টি খুন

সারাবিশ্বে এখন করোনা আতঙ্ক। সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কঠোর প্রচেষ্টায়ও দমানো যাচ্ছে না এই প্রাণঘাতি করোনাকে। কিন্তু মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করলেও, সরকার প্রশাসন করোনা নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে হবিগঞ্জে করোনার চেয়েও বড় ভাইরাস নিরব ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনায় হবিগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এই করোনাকালে বিভিন্ন সংঘাত ও সংঘর্ষে জেলায় খুন হয়েছে ৩৪ জন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সচেতন মহল ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।

জেলা পুলিশের তথ্যমতে- মার্চ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত হবিগঞ্জে ৩৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে মার্চ মাসে ১০টি, এপ্রিল মাসে ৬টি, মে মাসে ১০টি জুন মাসে ৫টি ও জুলাইয়ের ৯ দিনে ৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। করোনাকালে জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। এসব সংঘর্ষ-সংঘাতে আহত হয়েছে হাজারের উপরে। ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে অর্থ-সম্পদের। এরমধ্যে জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে লাখাই ও মাধবপুর উপজেলায়।

এদিকে বড় সংখ্যক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সচেতন মহলের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই মূলত এই খুনের ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে আইনজীবি ও সিনিয়র সাংবাদিক শাহ্ ফখরুজামান বলেন- ‘করোনায় জেলায় মাত্র ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সংঘর্ষ ও সংঘাতের ঘটনায় ৩৪টি খুন হয়েছে এই করোনাকালে। এই খুনগুলো কোন পূর্ব পরিকল্পনা বা ইঙ্গিত ছাড়াই হয়ে থাকে। যার কারণে পুলিশ সেগুলো আটকাতে পারে না। আমি মনে করি, এখানে আইন শৃঙ্খলাবাহীনির কোন ত্রুটি নেই। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই মূলত এগুলো হয়ে থাকে।’

তিনি বলেন- শুধু খুন নয়, করোনাকালে আশঙ্খাজনকভাবে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এর জন্য আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, ‘হবিগঞ্জ একটি দাঙ্গাপ্রবণ এলাকা। আমি হবিগঞ্জে যোগদানের পর গ্রাম্য দাঙ্গা প্রতিহত করতে লিফলেট বিতরণ করেছি, পোস্টার ছাপিয়েছে, উঠান বৈঠক করেছি, স্কুলে স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে গ্রাম্য দাঙ্গার কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছি। ফলে জেলায় গ্রাম্য দাঙ্গা অনেকটা কমে এসেছিল। আর কয়েকমাস সময় পেলে হবিগঞ্জে দাঙ্গার সংখ্যা শুণ্যের ঘরে নামিয়ে আনতাম।’

তিনি বলেন- ‘করোনার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থির অবনতি হয়েছে সেটা বলা যাবে না। দাঙ্গার ঘটনায় এসব হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়নি। অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে মূলত পারিবারিক কলহের জেরে।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘করোনার সময় মানুষ বাসা-বাড়িতে অবস্থান করছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও এলাকায় ফিরেছে অনেক মানুষ। ফলে বাড়িতে থেকে থেকে বিভিন্ন ছোটখাট বিষয় নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ, পাড়া-প্রতিবেশিদের সাথে জায়গা নিয়ে, রাস্তা নিয়ে, বৃষ্টির পানি পড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে সত্যিকার অর্থে পুলিশের কিছু করা নেই।’

Development by: webnewsdesign.com