বড়লেখায় বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক,বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন 

বৃহস্পতিবার, ০২ জুলাই ২০২০ | ৯:২৭ অপরাহ্ণ

বড়লেখায় বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক,বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন 
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমিকার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্হাপন প্রেমিকের। প্রেমিক কালন মিয়া বিয়েতে অসম্মতি জানালে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা নাজমিন বেগমের ১৯ ঘন্টা অনশন। অনশনকালে প্রেমিকের পরিবারের লোকজন নাজমিনের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রেমিকের পরিবারের লোকজনের মারধরে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ও গ্রাম পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করেন।বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসা দিন রয়েছে।
(১জুলাই) বুধবার বিকেল ৩টা থেকে প্রেমিকা নাজমিন বেগম বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পর্যন্ত প্রেমিক কালন মিয়ার বাড়িতে টানা ১৯ ঘন্টা অনশন করেন। প্রেমিকের পরিবারের লোকজনের মারধরে সকালে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ও গ্রাম পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক,বিয়েতে অসম্মতি ও নির্যাতনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে আহত নাজমিন বেগম প্রেমিক কালন মিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল উঠেপড়ে লেগেছে।
জানা গেছে, উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে কালন মিয়া পার্শ্ববর্তী খুটাউরা গ্রামের তাজ উদ্দিনের মেয়ে নাজমিন বেগমের সঙ্গে মোঠোফোন কলের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ৩১ মার্চ কালন মিয়া নাজমিনের বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর মেয়েটি বিয়ের জন্য কালনকে চাপ দিলে সে আশ্বাস দেয়। একপর্যায়ে সে বিয়েতে অসম্মতি জানালে নাজমিন বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানায়। তারা বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার মুরব্বিদের জানালে তারা নিস্পত্তির আশ্বাস দেন। গত ১৫ মে দুই পরিবারের অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন সালিস বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রেমিক কালন মিয়া ও তার বাবা-মা বিয়ে করে নাজমিনকে ঘরে তুলতে সম্মত হয়।
কিন্তুু বিয়ের প্রস্তুতি হিসেবে তারা ২দিন সময় চায়। এরই মধ্যে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে কালন মিয়া ও তার পরিবার কথা পাল্টিয়ে উল্টো নাজমিন ও তার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় ন্যায় বিচার চেয়ে ৮ জুন নাজমিন বেগম তালিমপুর ইউনিয়ন গ্রাম আদালতে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ জুন তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান দু’পক্ষের লোকজনকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু কালনের পরিবার শেষ পর্যন্ত না মানায় ঘটনার সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে নাজমিন বেগম বিয়ের দাবীতে বুধবার বিকেলে ৩টায় প্রেমিক কালন মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেয়।
সন্ধ্যায় সরেজমিনে গেলে নাজমিন বেগম জানান, ‘কালনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার প্রেমের সর্ম্পক। সে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। বিয়ের চাপ দেয়ায় প্রথমে আশ্বাস দিলেও পরে টালবাহানা শুরু করে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরে বিয়েতে রাজি হয়নি। শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও অস্বীকার করছে। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ের দাবীতে তার (প্রেমিকের) বাড়িতে অবস্থান করেছি। এসময় তার স্বজনরা আমাকে মারধর করেছে। বাড়ি থেকে বের করে দিতে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কিন্ত আমি বের হইনি। সে (প্রেমিক) যদি আমাকে বিয়ে না করে তবে তার বাড়িতেই আমি আত্মহত্যা করবো।
তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, উভয় পক্ষের কথা শুনে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেন। আপোস মীমাংসায় উভয়পক্ষ রাজিও হয়। কালন মিয়া নাজমিনকে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দেবে স্বীকার করে তারা ৩ দিন সময় নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত না মানায় সমাধান হয়নি। বুধবার বিয়ের দাবীতে প্রেমিকের বাড়িতে নাজমিনের অবস্থানের ও আত্মহত্যার হুমকির খবর পেয়ে রাতে তিনি দুইজন গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে পাহারা দিয়েছেন, যাতে মেয়েটি কোন দুর্ঘটনা না ঘটায়। সকালে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুনেছি আহত নাজমিন বেগম এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক জানান, এব্যাপারে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

Development by: webnewsdesign.com