করোনায় বিপর্যস্ত: পিয়নের চাকরি পেলেও করবেন ‘রিপন ভিডিও’..

বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২:১৮ অপরাহ্ণ

করোনায় বিপর্যস্ত: পিয়নের চাকরি পেলেও করবেন ‘রিপন ভিডিও’..

বুক পাটে তু মুখ পাটে না/এইত নারীর মন/লজ্জা শরম আসল কতা/কইরো সংরক্ষণ- এটা কোনো কবির লেখা ছড়া নয়। নেত্রকোনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক যুবক রিপন মিয়ার নিত্য ছন্দ। নিজে এরকম ছোট ছোট ছন্দ তৈরি করেন এবং ফেসবুকে এসে ভিডিওতে সেসব বলেন। রিপনের এসব ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ভিডিও। পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘রিপন ভিডিও’ নামে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় কয়েকটি নামের একটি হলো ‘রিপন ভিডিও’ তাকে চেনেন না অথচ ফেসবুকে সক্রিয় এমন নেটিজেন পাওয়া দুষ্কর।

মো. রিপন মিয়া পেশাগত জীবনে একজন কাঠমিস্ত্রী তিনি। সবকিছু ঠিক ঠাক চলছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণের ঢেউয়ে সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে রিপনের জীবনের। কাঠমিস্ত্রীর কাজ বন্ধ গত ৬/৭ মাস ধরে। তার ঘরে এখন খাবার নেই। সেই দৃশ্যই তিনি দেখালেন এক ভিডিও বার্তায়।

রিপনের সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। বলেন, ‘আমার ৬/৭ মাস ধরে কাজ নাই। আমি কাঠের দোকানে কাজ করতাম, সেই দোকান বন্ধ। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুইরা মাইনষের বাড়িঘর বাইন্দা দিতাম সেইডাও এহন কেউ করায় না, কারণ মাইনষের কাছে এহন টাকা নাই। আমি বিপদে পইড়া মাইনষের কাছে সাহায্য চাইছি। মানুষ আমারে হেল্প করছে। আমার বাড়িতে এহন এক মাসের চাউল আছে। এক মাস চলবো। তারপরে কি করমু?’

রিপন বলেন, ‘আমার এহন একটা চাকরি দরকার। আমি খুব শিক্ষিত না। কিন্তু কিছু কাজ তো করতে পারমু। এই ধরেন ফাইল আগায়ে দেওয়া, চা দেওয়া এইটারে কি কয় পিয়ন? পিয়নের মতো একটা চাকরি পাইলে করতাম। আমি খুব বিপদে আছি, দ্যাখেন না ভাই যদি লেইখা কিছু হয় আমার জন্য।’

রিপন তার মা’কেও ভিডিওতে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার পোলাডার ভিডিও দিয়া মানুষ কত কত টাকা কামাই করতাছে শুনতাছি, আর আমার পোলার ঘরে চাউল নাই। যারা তারে নিয়া টাকা কামাইতাছে তারা আগাইয়া আইতাছে না। আমাগো এখন একটু সাহায্য দরকার। আমার পোলাডারে একটু সাহায্য করে আপনারা।’

রিপনের বাড়ি নেত্রকোনা সদরের দক্ষিণ বিশোরায়। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও অতিমাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তিনি বারবার বলতে থাকেন। আমার ছন্দ শুনে মানুষ মজা পায়, আনন্দ পায়, ভিডিও শেয়ার করে। কিন্তু আমার এই ভিডিওটা কেউ শেয়ার করবে না, কারণ এখানে আমি দুঃখের কথা বলবে। দুঃখের জিনিস কেউ শেয়ার করে না। তবে রিপনের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে অনেকেই তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। রিপন অবশ্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেও একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। এখন একটি স্থায়ী কাজ চান রিপন। সে আশায় রয়েছেন, জানেন না আসলেই কি কেউ তাকে এমন একটা দেবে?

Development by: webnewsdesign.com