মাধবপুরে দাম নেই চামড়ার: অনেকেই করেছেন দান

রবিবার, ০২ আগস্ট ২০২০ | ৮:১২ অপরাহ্ণ

মাধবপুরে দাম নেই চামড়ার: অনেকেই করেছেন দান

হবিগঞ্জের মাধবপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। নামমাত্র দামে সংগ্রহকারীদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। শনিবার (১ আগস্ট) কোরবানি শুরুর পরপরই পাড়া মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। তবে, তা বিক্রি করতে এসে দাম না পাওয়ার অভিযোগ করছেন তারা। আবার অনেকেই দাম না পাওয়ায় তা বিক্রি না করে মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানায় দান করছেন। তারা জানান, বড় আকারের একটি চামড়া মাত্র একশ টাকায় বিক্রি করার চেয়ে দান করে দেয়াই ভালো। সকাল থেকেই মাধবপুর পৌর শহরের ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে চামড়া কিনে এনে ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বিক্রি করছেন বড় বড় আড়ৎদারদের কাছে। এদিকে, দাম কম হলেও মৌসুমী ব্যাবসায়ীদের ক্ষতির মুখে পড়বেন না বলে জানিয়েছেন চামড়া সংগ্রহকারীরা।

দাম কম থাকার কারণ জানতে চাইলে মাধবপুর পৌরশহরের ব্যবয়ায়ী সাজু মিয়া জানান, এখন বাজার খারাপ ঢাকার বাইরেও দাম কমের কারণে চামড়া সংগ্রহ করে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। সরকারের বেধে দেয়া দামের চেয়েও কম দামে কেনার পরও বিক্রি করতে না পারারও অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। দেশে বছরব্যাপী ট্যানারি শিল্পে দরকারি চামড়ার ৫০ ভাগের বেশি সংগ্রহ করা হয় প্রতিবছর কোরবানির সময়। এই সময়ে চামড়া সংগ্রহে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন ট্যানারি মালিক, কাঁচা চামড়ার আড়ৎদার, মৌসুমী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। এজন্য ঈদের আগেই সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেয়া হয় লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম। যেন অযথা বাড়তি দামে চামড়া কেনাবেচা করে তা সংরক্ষণ করার পর্যায় পর্যন্ত যাওয়ার আগেই দরদামের টানাটানিতে নষ্ট না হয় দেশের ২য় বৃহত্তম রপ্তানি খাতের কাঁচামাল। বিশেষ করে মৌসুমী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কিনেছে এমন অভিযোগে ২০১৫ সালে রাজধানীর পোস্তার আড়ৎদাররা কাঁচা চামড়া কেনা থেকে বিরত থাকেন।

 

এতে অনেক চামড়া সে বছর পোস্তার রাস্তায় দাঁড়ানো ট্রাকেই নষ্ট হয় ঢাকার বাইরে থেকে আসা মূল্যবান চামড়া। ২০১৩ সালে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৮৫ থেকে ৯০ টাকা আর মাধবপুরে দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ২০১৪ ইং সালে আগের বছরের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে ১৫ টাকা কমে এবছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়। সেবার ঢাকায় প্রতি ফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৭০ থেকে ৭৫ টাকা আর মাধবপুরে বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

সারাদেশে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম ধরা হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ২০১৬ ইং সালে দাম নির্ধারণে নিম্নমুখী ভাব রাখা হয়। লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার প্রতি বর্গফুটের সর্বনিম্ন দাম ধরা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মাধবপুরে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ ইং সালে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয় ৫০ থেকে ৫৫ ও মাধবপুরে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ ইং সালে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫-৫০ টাকা এবং মাধবপুরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সারাদেশে খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা। ২০১৯ ইং ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫-৫০ টাকা এবং মাধবপুরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সারাদেশে খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা। ২০২০ ইং সালে রাজধানীতে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, আর মাধবপুরে ২৬ থেকে ৩০ টাকা এবং সারাদেশে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দামের পরিবর্তন না আসলে অনেক ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয় করা থেকে বিরত থাকবেন।

Development by: webnewsdesign.com