অতিমাত্রায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে যে নয় ক্ষতি রয়েছে

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০ | ৮:০৫ অপরাহ্ণ

অতিমাত্রায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে যে নয় ক্ষতি রয়েছে

ত্বকের ক্ষতি ছাড়াও অতিমাত্রায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারের বেশকিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে মানব শরীরে করোনাভাইরাস সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্ন থাকার বিকল্প নেই। হাতের স্পর্শ থেকে যেহেতু করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেহেতু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন কিছুক্ষণ পর পর সাবান বা অন্তত ৬০% অ্যালকোহল সমৃদ্ধ স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে। তবে চিন্তার বিষয় হলো ত্বকের ক্ষতি ছাড়াও অতিমাত্রায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারের বেশকিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে মানব শরীরে।মার্কিন ডার্মাটোলজিস্ট ক্যারোলিন নেলসনের মতে, “অ্যালকোহলসমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতিমাত্রায় ব্যবহারে চামড়ায় লালচে দাগ, শুষ্কতা, ফেটে যাওয়া এমনকি চুলকানি ও ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

একজিমা> ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহারে একজিমা হতে পারে। সেজন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি শুষ্কতার কবল থেকে বাঁচতে ত্বকে ময়েশ্চেরাইজার (যেমন- মিনারেল অয়েল, পেট্রোলিয়াম জেলি) ব্যবহার করা যেতে পারে।

ত্বকের জ্বালাপোড়া> হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো মূলত এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। মার্কিন কসমেটিক কেমিস্ট ভানেস্সা থমাসের মতে, “হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রাথমিক উপাদান হলো ইথাইল অথবা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল। এর সঙ্গে সফেনার এবং সুগন্ধি মিশিয়ে বাজারজাত করা হয়। ঘন ঘন এর ব্যবহারে ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। এর মূল কারণ অ্যালকোহল।” তাই জীবাণু ধ্বংসের জন্য হালকা গরম পানি এবং সাবানই সর্বোত্তম উপায়।

প্রজনন ক্ষমতার ওপর প্রভাব> বেশিরভাগ স্যানিটাইজারের মূল উপাদান অ্যালকো হলেও নন-অ্যালকোহলিক স্যানিটাইজারও পাওয়া যায় বাজারে। নন-অ্যালকোহলিক এসব পণ্যের প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয় ট্রাইক্লোসান অথবা ট্রাইক্লোসানের মতো অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান।একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজনন ক্ষমতা ও ভ্রুণ উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে ট্রাইক্লোসানের। পাশাপাশি এটি অ্যাজমার ঝুঁকিও বাড়ায়, বলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. ক্রিস নরিস।

শরীরকে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স’ করে তোলা> প্রফেসর ড. নরিস আরও বলেন, ট্রাইক্লোসানের সংস্পর্শে শরীর এমন সব ব্যাক্টেরিয়ার বসবাসের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে পারে, যা শরীরকে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

হরমোনের সমস্যা>যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) মতে, ট্রাইক্লোসান সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে হরমোনজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে তোলা> গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাইক্লোসান মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে তোলে।

 

শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধির ওপর প্রভাব> কিছু কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অতিমাত্রায় সুগন্ধি যু্ক্ত করা হয়। এই সুগন্ধির মূল উপাদান থ্যালেট ও প্যারাবিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক। থ্যালেটের প্রভাবে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং প্রজনন ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর প্যারাবিনও হরমোন সমস্য, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, জন্মগত ত্রুটি এবং জনন কোষ তৈরির ওপর নেতিকবাচক প্রভাব ফেলে।

ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি> অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার অতিরিক্ত ব্যবহারের আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো চামড়ার স্থায়ী ক্ষতি। এর ফলে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এছাড়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার শরীরের জন্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে যা মোটেই ভালো কিছু নয়।

অ্যালকোহল পয়জনিং> বেশিরভাগ হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অতিমাত্রায় অ্যালকোহলের উপস্থিতি শরীরে অ্যালকোহল পয়জনিংয়ের কারণ। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই পণ্যটির অতিমাত্রায় ব্যবহার বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা না বুঝে স্যানিটাইজার মুখে দেয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।

 

এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পরিবর্তে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন। তারা মনে করেন, কেবলমাত্র সাবান, পানি এসব একেবারেই না পাওয়া গেলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিৎ।

Development by: webnewsdesign.com