ক্রেস্টের প্রতারক এমডি শহিদুল্লাহ কারাগারে

বৃহস্পতিবার, ০৯ জুলাই ২০২০ | ৫:২৬ অপরাহ্ণ

ক্রেস্টের প্রতারক এমডি শহিদুল্লাহ কারাগারে

গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহিদুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) একদিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ জুলাই) শহিদুল্লাহ ও তার স্ত্রী নিপা সুলতানাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় পল্টন থানার প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য শহিদুল্লাহর ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে শহিদুল্লাহর স্ত্রী নিপাকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 

সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিবির রমনা বিভাগ। এরপর পল্টন থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

ডিবির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ‘শত শত গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মালিক মো. শহিদুউল্লাহ সস্ত্রীক আত্মগোপনে যান। প্রতারণা শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।’

এর আগে, গত ২৩ জুন বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দেয় শেয়ার ও ইউনিট বেচা-কেনার মধ্যস্থতাকারী ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিকরা। ওইদিন থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। শহিদুল্লাহকে খুঁজে না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই হাউজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা।

 

এই ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তড়িৎ গতিতে পদক্ষেপ নেয়। তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) দুই প্রতিনিধিসহ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাটের পরিমাণসহ বিস্তারিত তুলে ধরবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করলেও তারা কেন মুঠোফোনে ম্যাসেজ পায়নি, এ জন্য সিডিবিএলের কোনো ঘাটতি আছে কি না, তা অনুসন্ধান করবে।

এছাড়া হাউজটির মালিকরা যেন বিদেশে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে ডিএসই থেকে পল্টন থানায় অভিযোগ করা হয়। একই সঙ্গে মালিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করে। এখন তাদের ১০টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।

শহিদুল্লাহ আত্মগোপনে চলে গেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর এমডি বলেন, ‘ব্রোকারেজ হাউজটিতে ২১ হাজার বিনিয়োগকারীর ৮২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে হাউজটির দেনা-পাওনার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।’

 

তিনি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের পাওনা দ্রুত পরিশোধের পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রয়োজনে সিডিবিএলের কাছে থাকা ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের শেয়ার বিক্রি করে গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করা হবে।’

এরপর বিনিয়োগকারীদের টাকা ও শেয়ার ফিরিয়ে দেয়ার অংশ হিসেবেই বিনিয়োগকারীদের তথ্য চায় ডিএসই। এ জন্য একটি হটলাইনও চালু করা হয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউজটির বৈধ গ্রাহকরা তাদের শেয়ার ও অর্থ ফেরত পেতে ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার (সিআরও) কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া তথ্য ও সহায়তার জন্য ০২-৯৫৬৪৬০১ টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে চালু করা হটলাইনেও তথ্য ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ০১৭১৩২৭৬৪১৬ মোবাইল নম্বরে অথবা icald@dse.com.bd ই-মেইলে যোগাযোগ করতে হবে।

 

এদিকে বন্ধ করার আগে ব্রোকারেজ হাউজটি থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। তবে এর বিনিময়ে ডিএসইকে দেয়া চেক বাউন্স করে। ফলে হাউজটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডিএসই। তাদের কাউকে না পেয়ে কেনা শেয়ারগুলো সাময়িকভাবে ফ্রিজ করে রাখে। পরবর্তীতে ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করে পাওনা পরিশোধ করে ডিএসই।

Development by: webnewsdesign.com