বাউফলে বিদ্যুতের লোডসেডিং নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ১ লাখ ১০ হাজার গ্রাহক

সোমবার, ০৬ জুলাই ২০২০ | ৫:০৩ অপরাহ্ণ

বাউফলে বিদ্যুতের লোডসেডিং নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ১ লাখ ১০ হাজার গ্রাহক

পটুয়াখালীর বাউফলে লোডসেডিং নিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছ হাজার হাজার মানুষ। ঝড়-বৃষ্টি, গ্রীড ফল্ট, জাম্ফার পুড়ে যাওয়া, ইন্স্যুলেটর পুড়ে যাওয়া, সাব-স্টেশনের ট্রান্সফরমার বিকল, লো-ভোল্টেজের কারণে সরবরাহ বন্ধ, লাইনে গাছ পড়েছে, খুঁটি ভেঙ্গেছে ইত্যাদি নানা কারণে বাউফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। লোডসেডিংয়ের কারণে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ নির্ভর বিভিন্ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ছে। ফলে বাউফলের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এবিষয়ে বাউফল পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।

 

বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাউফলের আওতায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে এবং এক লাখ দশ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিমাসে প্রায় চার কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হচ্ছে। এরমধ্যে উপজেলার বাণিজ্যিক বন্দর কালাইয়াতেই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল আদায় হচ্ছে। কিন্তু বিগত কয়েক মাস যাবত লাইন মেরামত, ঝড়-বৃষ্টি এবং লো-ভোল্টেজসহ নানাবিধ কারণে ঘোষণা দিয়ে এবং ঘোষণা না দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গ্রাহকরা। বর্তমানে বাউফলে বিদ্যুৎ নেই এটাই স্বাভাবিক। কখন আসবে সেটা অফিস কর্তৃপক্ষও সঠিকভাবে বলতে পারেন না, এমনই অবস্থা বিরাজ করছে। ভূক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডসেডিংয়ের কারণে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের চরম ক্ষতি হচ্ছে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে চাহিদার থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে সরকারের এমন ঘোষণারও অনেকে সমালোচনা করছেন। এরফলে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে।

 

বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সূত্র জানায়, বাউফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের একাধিক কারণ রয়েছে। এরমধ্যে লাইনের উন্নয়নমূলক কাজ করা এবং ঝড়-বৃষ্টি অন্যতম। সূত্র আরো জানায়, পাওয়ার গ্রীড কোম্পানীর মাধ্যমে বরিশাল-পটুয়াখালী ১৩২ কেভি লাইনের উন্নয়ন কাজ চলছে। এছাড়া পটুয়াখালীর কালিকাপুর উপকেন্দ্র থেকে বাউফলে আসা ৩৩ হাজার ভোল্টেজের কমন গ্রীড লাইনটি কাশিপুর এসে গলাচিপা উপজেলা ও বাউফলে ভাগ হয়েছে। এই গ্রীডে ফল্ট হলেও বাউফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে পটুয়াখালীর কালিকাপুর উপকেন্দ্র থেকে বাউফলের জন্য ভিন্ন গ্রীড লাইনের কাজ শুরু হয়েছে। এই গ্রীড লাইনটির কাজ সম্পন্ন হলে বাউফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে। অপরদিকে বাউফলে বর্তমানে ২৩ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাউফলের গোসিংগা সাব স্টেশনে ১০ ও ৫ মেগাওয়াটের দুটি ট্রান্সফরমার রয়েছে। ফলে চাহিদা মেটাতে গিয়ে কিছু লাইন বন্ধ করে সমন্বয় করতে হচ্ছে। অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিসয় হচ্ছে, বরিশাল-পটুয়াখালীর ৩৩ কেভি লাইনে অনেক সময় ভোল্টেজ নেমে ২৬/২৭ এ চলে আসে। এসময় সাবস্টেশনের ট্রান্সফরমার বন্ধ রাখতে হয়। তা না হলে ট্রান্সফরমারের ক্ষতি হতে পারে। এর কারণেও অনেক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।

 

বাউফল পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম কেএম আজাদ জানান, বরিশাল-পটুয়াখালী ১৩২ কেভি লাইন থেকে বাউফলের জন্য ৩৩ হাজার ভোল্টেজের একটি ভিন্ন গ্রীড লাইন বাউফলে এনে একটি উপকেন্দ্র করার জন্য এক বছর আগে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সেটি হলে বাউফল ও দশমিনায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কোন ঝামেলা থাকবে না।

 

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কর্মরত ছিলেন বাউফলের এমন অনেকে মনে করেন, ইতিপূর্বে ভোলার সাথে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বাউফলে যে বিদ্যুৎ লাইনটি ছিল সেটি ছিল নিরাপদ এবং সে সময় বাউফলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে সে লাইনটি বিচ্ছন্ন করে দেয়ায় বাউফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে নানা ধরণের জটিলতা দেখা দিয়েছে। ভোলার সাথে বিচ্ছিন্ন হওয়া লাইনটি পূণরায় চালু হলে বাউফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে। তাদের মতে, বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ অফিস যে পরিকল্পণার কথা বলছেন, সেগুলো বাস্তবায়নে অনেক অর্থ এবং দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। যার কারণে খুব শীঘ্রই বাউফলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

 

এদিকে বাউফলে ভুতুরে বিল নিয়ে অনেক গ্রাহক ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। ভূক্তভোগি বেশ কয়েকজন গ্রাহক জানান, করোনা প্রার্দুভাবের পূর্বে তাদের মাসিক যে বিল করা হতো তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বিল করা হয়েছে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে। ওই বিল সংশোধনের জন্য অফিসে গেলে পরবর্তী মাসে সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়ে হাতে পাওয়া বর্তমান বিল পরিশোধের জন্য বলা হয়। হাতে গোনা প্রভাবশালী দু’একজনের বিল সংশোধন করা হলেও সিংহভাগ গ্রাহক অতিরিক্ত বিল দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রাহকরা জানান, নিয়ম অনুসারে আবাসিক গ্রাহকের ০১ থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের বিল করা হয় ৪.১৯ টাকা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিল করা হয় ৫.৭২ টাকা হিসেবে। সে অনুযায়িই ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তিন বা চার মাসের গড় বিলে একই সাথে বেশি ইউনিট ধরে বিল করায় সেই টাকার ওপর ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এরফলে একজন গ্রাহককে অতিরিক্ত অনেক টাকা গুণতে হচ্ছে।

 

এভাবে ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা এবং বড় শিল্প বা বাণিজ্যিক গ্রাহকদের হাজার হাজার টাকা বেশি বিল করা হয়েছে। মাইকিং করে বিল সংশোধনের জন্য অফিসে যোগাযোগ করার কথা বলা হলেও অফিস থেকে পরবর্তী মাসে সমন্বয় করা হবে বলে জানানো হয়। এবিষয়ে বাউফল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম বলেন, শতকরা ৯৫ ভাগ বিল ঠিক আছে। ৫ ভাগ বিল নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও সেগুলো সংশোধন প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com