দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে ট্রাকচালক অসহায়

শুক্রবার, ০৫ জুন ২০২০ | ৯:৫০ অপরাহ্ণ

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দালালচক্রের দৌরাত্ম্যে ট্রাকচালক অসহায়

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে ট্রাক দালালচক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিআইডাব্লিউটিসির কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহের পাশাপাশি সিরিয়াল ভেঙে দ্রুত ফেরি পার করিয়ে দেওয়ার কথা বলে চালকদের জিম্মি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রের লোকজন। ট্রাকচালকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে দালাল না ধরলে সহসা ফেরির নাগাল পাওয়া যায় না। এদিকে ট্রাক দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার দালালকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকেলে তাদের প্রত্যেককে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

 

 

বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুট। দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ঢাকাগামী বিভিন্ন গাড়ির পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে ৭ শ পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পার হয়ে থাকে। সরকার নির্ধারিত ফেরিভাড়া অনুযায়ী ৫ থেকে ৭ টন ওজনের প্রতিটি সাধারণ ট্রাকের ফেরিভাড়া ১০৬০ টাকা। তবে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ট্রাকে বেশি মাল বহন করলে অতিরিক্ত ওজনের প্রতিটন ১২০ টাকা হরে মূল টিকিট মূল্যের সঙ্গে যোগ করা হয়। এ জন্য ডিজিটাল ওয়েস্কেলের মাধ্যমে ফেরিপার হতে আসা প্রতিটি ট্রাকের সঠিক ওজন পরিমাপ করা হয়। পরে স্কেল থেকে দেওয়া ওজন স্লিপ অনুযায়ী বিআইডাব্লিউটিসির টিকিট কাউন্টার থেকে প্রতিটি ট্রাকের ফেরিভাড়া আদায় করা হয়ে থাকে।

 

 

এদিকে ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়. দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডাব্লিউটিসির ফেরির টিকিট বুকিং কাউন্টার ঘিরে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য চলছে দীর্ঘকাল যাবৎ। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ওই দালালচক্রে বর্তমান দুই শতাধিক সক্রিয় সদস্য রয়েছে। টিকিট সংগ্রহের পাশাপাশি সিরিয়াল ভেঙে দ্রুত ফেরিপার করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের জিম্মি করে প্রতিদিন তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গরুবোঝাই ট্রাকপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাঠবোঝাই ট্রাক ১৫০ টাকা, পানবোঝাই ট্রাক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি ফলবোঝাই ট্রাক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, ভারত থেকে আমদানিকৃত ফলবোঝাই ট্রাক ১,২০০ টাকা চাঁদা হিসেবে তারা আদায় করছে।

 

 

আজ শুক্রবার দুপুরে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরোপয়েন্টে ফেরির অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাকের কয়েকজন চালক জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ট্রাকচালকদের বাধ্যতামূলকভাবে স্থানীয় দালাল ধরতে হয়। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে দালাল না ধরলে কোনো ট্রাক সহসা ফেরির নাগাল পায় না। বহু আগে থেকেই এ ঘাটে ফেরিপারাপারে সাধারণ ট্রাকের চালকরা ওই দালালচক্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই দৌলতদিয়া ঘাটে এসে অসহায় ট্রাকচালকরা দালাল ধরে ফেরিপার হতে বাধ্য হচ্ছেন।

 

 

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধের পাশাপাশি দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা দালালমুক্ত করতে নিয়মিত পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার ট্রাক দালালকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল্লাহ আল-মানুনের নেতৃত্বে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই চার দালালকে মোট ১২ হাজার টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

Development by: webnewsdesign.com