হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অতি পরিচিত চড়ুই পাখি

শুক্রবার, ২০ মার্চ ২০২০ | ৭:৫২ অপরাহ্ণ

হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অতি পরিচিত চড়ুই পাখি

যেকোনো লোকালয়ের আশেপাশে চড়ুই একটি সুপরিচিত পাখি এরা জনবসতির মধ্যে থাকতে ভালোবাসে তাই এদের ইংরাজি নাম হাউস স্প্যারো অর্থাৎ গৃহস্থালির চড়ুই পৃথিবীতে মোট ৪৮ প্রজাতির চড়–ই দেখতে পাওয়া যায় জীববিজ্ঞান অনুযায়ী এদের পরিবার ১১টি গণে বিভক্ত গৃহস্থালির চড়–ই এদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত এদের আদিনিবাস ছিল মূলত ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ

চড়ুই একটি চঞ্চল প্রকৃতির পাখি এরা মানুষের আশপাশে বসবাস করতে ভালোবাসে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে চড়ুই মানুষের সান্নিধ্যে আসে আমাদের ঘরবাড়ি আশপাশের ভাঙা দালান এবং বড় ও বুড়ো গাছের গর্তে এরা বাসা বাঁধে চড়ুই বছরে একাধিকবার প্রজনন করে প্রতিবারে ৪ থেকে ৬টি করে ডিম দেয় এদের ছানা বেঁচে থাকে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ গত কয়েক দশক থেকে চড়ুইয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে ১৯৮০ সাল নাগাদ পৃথিবীর বৃহদাংশজুড়ে হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। শুধু লন্ডন শহরেই ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে সংখ্যা হ্রাসের হার ৭০ ভাগ।

চড়ুইয়ের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ হল- নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। ক্ষতিকর পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষক যথেচ্ছ কীটনাশক ব্যবহার করে। আর চড়ুই প্রধানত শস্যদানা, ঘাসের বিচির পাশাপাশি অসংখ্য পোকামাকড় খেয়ে থাকে কিন্তু ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কারণে এসব খাবার খেয়ে তারা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গবেষকদের মতে,গ্রামের দিকে চড়ুইয়ের দেখা মিললেও শহরাঞ্চলে সে দৃশ্য প্রায় বিরল এর জন্য প্রকৃতভাবেই দায়ী ক্রম বর্ধমান মোবাইল টাওয়ার টাওয়ার থেকে নির্গত ক্রমাগত বিকিরণের জেরেই দ্রুত হারে কমে যাচেছ এই পাখিটি চড়ুইয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল- এদের নিয়ে ব্যবসা করা অনেক পশ্চিমা দেশে চড়ুই দিয়ে তৈরি হয় সৌখিন খাবার sparrow pie এমনও দেখা গেছে যে, এই খাবার তৈরির জন্য অসংখ্য চড়ুইয়ের প্রয়োজনে একবার ১২,৬৩০০০ হিমায়িত চড়ুইয়ের চালান ধরা পড়ে এছাড়া ধূমায়িত চড়ুই খাবার হিসেবে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর সুপার মার্কেটে বিক্রি হতে দেখা যায় আবার পৃথিবীর অনেক দেশের চিড়িয়াখানায় শিকারি পাখিদের খাবার হিসেবে চড়ুই ধরার চল ছিল।

কয়েক দশক আগেও ঢাকা শহরে বাড়ির উঠান, ঘরের কোণে, বারান্দায় চড়ুইয়ের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বাভাবিক চড়ুইয়ের ডাকে শুরু হতো সকাল আর সন্ধ্যায় চড়ুইয়ের ডাকে আমরা বুঝতাম মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতে হবে। ঘরের ভেন্টিলেটারে চড়ুই দম্পতির সংসারটায় সদ্য জন্ম নেয়া চড়ুই আমাদের পরিবারের অংশই ছিল এসব খুব বেশিদিন আগের নয়। গেল দুই দশক আগের গল্প চড়ুই আমাদের কতখানি উপকার করে তা উপলব্ধি করতে একটি বিখ্যাত ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। ঘটনাটি চীনের। চড়ুই ফসলের ক্ষেতের সর্বনাশ ডেকে আনে ভেবে ১৯৫৮ সালে মাও-সে-তুং এর নির্দেশে অসংখ্য চড়ুই নিধন করা হয়। কেননা একটি চড়ুই বছরে ৪ থেকে ৫ কেজি শস্য খায় সুতরাং, দশ লক্ষ চড়ুইয়ের খাবার বাঁচিয়ে প্রায় ৬০ হাজার ব্যক্তির খাদ্যের জোগান দেওয়া যেতে পারে অতএব শুরু হল প্রচারণা পুরস্কার ঘোষণা করা হল চড়ুই মারার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে চড়ুই নিধন হতে লাগল যেমন- খুব জোরে জোরে ড্রাম বাজাতেই চড়ুই উড়ে উড়ে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে পড়তে লাগল ডিম নষ্ট করা হল। তছনছ করা হল বাসা জাল দিয়ে ধরা হল অসংখ্য চড়ুই।

বন্দুক দিয়ে মারা হল বাকি চড়ুই এভাবে The great sparrow campaign নামে প্রচারণার মাধ্যমে চড়ুইশূন্য হল চীন চীন থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেল চড়ুই প্রকৃতিতে চড়ুইয়ের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আমাদের অসচেতনতার কারণে আমরা সেটা বুঝতে পারি না পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রকৃতি থেকে আর কোনো চড়ুইয়ের বিলুপ্তি নয় আমাদের বাসাবাড়ির বারান্দায় যদি চড়ুইয়ের বাস উপযোগী করে দু’একটি ছোট বাক্স বেঁধে রাখি এতে বিলুপ্তির হাত থেকে যেমন চড়ুই বাঁচবে, তেমনি বাড়ির শিশুরাও পাবে আনন্দ।

Development by: webnewsdesign.com