বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে কালীগঞ্জের সুভাষের শিল্পকর্ম

বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০ | ৯:১০ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে কালীগঞ্জের সুভাষের শিল্পকর্ম
বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসায় কালীগঞ্জের সুভাষের শিল্পকর্ম

শহরে শিল্পী আর্ট নামে ছোট একটি দোকান আছে। সাইনবোর্ড, ব্যানার লিখে যা আয় হয় সেটা দিয়েই চলে সংসার। বাম চোখের সমস্যা হওয়ায় এখন আর তেমন একটা কাজ করতে পারেন না।কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে একের পর এক শিল্পকর্ম করে যাচ্ছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া এলাকার মুজিবভক্ত সুভাষ দাস।বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে কখনো নিজ হাতে ছবি আঁকেন, কখনো আবার মুজিবকে নিয়ে নিজের লেখা গান, নিজের সুরে নিজেই কণ্ঠ দেন আবার বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে কাদামাটি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। এ যেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার বিরল ভালোবাসা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুভাষ দাস নিজে বঙ্গবন্ধুকে রং-তুলিতে এঁকেছেন। যার দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট ও প্রস্থ ৩০ ফুট। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন উপলক্ষে দেশ যেখানে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে এই মুজিব ভক্ত কাদামাটি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর চিত্রকর্ম তৈরি করতে ব্যস্ত।তিনি বিভিন্ন সাইজের মোট ৪টি ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটি লম্বায় ৭ ফুট ও প্রস্থে ৫ ফুট।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা আর মহত্বের কারণেই সুভাষ দাস এসব কাজ করে থাকেন। তিনি কোন প্রতিদান চান না।সুভাষ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে আমি শুধু একবেলা দুপুরের খাবার পেয়েছি। আমার বাম চোখটা হারিয়েছি। কিন্তু তাতে আমার কোনো আপেক্ষ নেই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার সব কর্ম প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চান।সুভাষ দাস একাধারে একজন গীতিকার, সুরকার ও একজন ভাস্কর্য শিল্পী। এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৬টি গান লিখেছেন ও সুর করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি করেছেন অসংখ্য মাটির ভাস্কর্য। রঙ আর তুলি দিয়ে তৈরি করেছেন ছবি।বঙ্গবন্ধুর ছবিতে রঙ তুলির আঁচড় দিতে গিয়ে বাম চোখ হারিয়েছেন এই মুজিবভক্ত সুভাষ দাস। কিন্তু তাতে তার কোনো আক্ষেপ নেই। তার এখন একটাই সাধনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি করা মিউজিক ভিডিওটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো।সুভাষ দাস জানান, সম্প্রতি ‘ও মুজিব তুমি মিশে আছো বাঙালির প্রাণে প্রাণে’ শিরোনামে নিজের লেখা ও সুরে কণ্ঠ দিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছেন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর জন্য। মিউজিক ভিডিওটির চিত্রায়ন করা হয়েছে নিজের হাতে আঁকা শেখ মুজিবের ছবি দিয়ে।সুভাষ দাস বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাটির তৈরি ভাস্কর্য নিজে তৈরি করে বিভিন্ন মানুষকে দিয়েছি। বিনিময়ে কোনো টাকা নেয়নি। এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে সহযোগিতাও করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার এই কর্মগুলো একটু দেখল আমার ইচ্ছাপূরণ হতো।তিনি বলেন, ভিডিওর জন্য ৩০ ফুট উচ্চতা ও ২৫ ফুট প্রস্থ বঙ্গবন্ধুর তিনটি ছবি আঁকি। এই ছবি আঁকতে গিয়ে তার ডান চোখে রঙ পড়ে। এরপর চোখে যন্ত্রণা শুরু হয়।

ভারতে গিয়ে চোখের অপারেশন করি। ডান চোখ ভালো হওয়ার পর এবার বাম চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখি।তিনি বলেন, ‘শিল্পী আর্ট’ নামে নিজের একটি আর্টের দোকান আছে। সেখানে থেকে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালায়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন কাজ করি। চোখে কম দেখি তাই এখন আর কাজ করতে পারি না। বাড়িতে ছবি আঁকা শেখায়। এছাড়া রোজগারের কোনো পথ আমার নেই। এই গানের পেছনে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এজন্য অনেক ধার দেনা করতে হয়েছে।সুভাষ দাসের স্ত্রী রেখা রানী দাস বলেন, শেখ মুজিবকে ভালোবেসে এখন আমরা পথে বসার প্রহর গুনছি। দোকানের কাজ বন্ধ রেখে সে শেখ মুজিবের ছবি আঁকতো। এনিয়ে প্রায়ই সংসারে গণ্ডগোল হতো। তারপরেও তাকে থামানো যায়নি। এখন কোনো কাজ নেই। খুব কষ্টেই চলছে আমাদের।

এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে।এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, আমি সুভাষ দাসকে ভালোভাবে চিনি। আমি তার চিত্রকর্মও দেখেছি। সময় ও সুযোগ বুঝে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো।

 

 

 

 

 

 

Development by: webnewsdesign.com