এক সুন্দরী সুপারস্টারের বেপরোয়া জীবন

বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

এক সুন্দরী সুপারস্টারের বেপরোয়া জীবন

চার বছর বয়সে বাবার এক বন্ধু হাতে র‌্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েকটা বসন্ত পেরিয়ে সেই শিশু নিজেই টেনিসের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিভার পাশাপাশি যেন গ্ল্যামারের প্রতিশব্দও মারিয়া শারাপোভা। দেড় দশকের ক্যারিয়ার শেষে তার অবসরে শেষ হল টেনিস কোর্টে গ্ল্যামার কোশেন্টের রুশ উপকথার এক অধ্যায়। কোর্টের বাইরে বারবার তিনি জড়িয়েছেন বিভিন্ন সম্পর্কে। সেগুলো নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি। এখন সময় রুশ সুন্দরীর আলোচিত জীবনদের দিকে ফিরে তাকানোর।

বিখ্যাত দুই ফ্যাশন পত্রিকা ‘ভোগ’ এবং ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’-এ বুধবার শারাপোভা লিখেছেন, ‘টেনিস, আমি তোমাকে গুডবাই জানালাম। টেনিস র‌্যাকেট হাতে ২৮ বছর কাটিয়ে আর পাঁচটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার পরে আমি এখন অন্য শৃঙ্গ জয় করতে তৈরি।’ মাত্র ৩২ বছর বয়সে তার এই সিদ্ধান্তে ভক্তরা অশাহত হবেন ঠিকই। কিন্তু টেনিস-সুন্দরী তার সিদ্ধান্তে অনড়। বিদায়বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘আমি টেনিসকে নিজের জীবন দিয়েছিলাম, টেনিসও আমাকে নতুন জীবন দেয়।’

১৯৮৭ সালের ১৯ এপ্রিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ন্যাগান প্রদেশে মারিয়া শারাপোভার জন্ম। তার এক বছর আগে ঘটেছিল ভয়ঙ্কর চেরেনবিল বিস্ফোরণ। এই পরমানু বিস্ফোরণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে শিশুকন্যাকে নিয়ে সোচি চলে এসেছিলেন মারিয়ার বাবা-মা। সোচিতেই বাবার বন্ধু আলেকজান্ডার কাফেলনিকের মাধ্যমে জীবনে প্রথম র‌্যাকেট ধরেছিলেন মারিয়া। আলেকজান্ডারের ছেলে ইয়েভজেনিও বিশ্বমানের টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। প্রথমে বাবার সঙ্গে স্থানীয় পার্কে গিয়ে খেলেন মারিয়া। পরে মেয়ের উৎসাহ দেখে তাকে প্রশিক্ষক ইউরি ইউৎকিনের কাছে পাঠান মারিয়ার বাবা, ইউরি শারাপোভা।

ওই বয়সে মারিয়ার হাত ও চোখের সমন্বয় মুগ্ধ করেছিল কোচ ইউরিকে। এরপর মস্কোয় এক টেনিস প্রশিক্ষণ শিবিরে মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার চোখে পড়েন মারিয়া। তার বাবাকে মার্টিনা পরামর্শ দেন মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় যেতে। ফ্লোরিডায় আইএমজি অ্যাকাডেমিতে মারিয়াকে পেশাদার প্রশিক্ষণ নিতে বলেন মার্টিনা। ১৯৯৪ সালে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মারিয়াকে নিয়ে তার বাবা এসে পৌঁছলেন আমেরিকা। হাতে সম্বল মাত্র ৭০০ ডলার; তার উপর কেউ ইংরেজি জানেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাননি মারিয়ার মা ইয়েলেনা। দুই বছর মাকে ছাড়াই থাকতে হয় মারিয়াকে।

আমেরিকায় পৌঁছনোর পর মারিয়ার বাবা সামান্য মজুরিতে বিভিন্ন রকমের কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে মারিয়ার বার্ষিক ফি মকুব করে আইএমজি। কয়েক বছর পরে খাতায় কলমে তাদের ছাত্রী হয় ৯ বছরের মারিয়া। ২০০৪ সালে ১৭ বছরের কিশোরী শারাপোভার দ্যুতিতে ঝলসে যায় টেনিস দুনিয়া। উইম্বলডন ফাইনালে সেরিনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে শারাপোভা বুঝিয়ে দেন, প্রাণোচ্ছ্বল এক তরুণীর রূপান্তর ঘটছে টেনিস-রানিতে। উইম্বলডনের ইতিহাসে শারাপোভা ছিলেন তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন।

১৮ বছর বয়সে বিশ্বের এক নম্বর নারী টেনিস খেলোয়াড়ের শিরোপা পান শারাপোভা। সেই প্রথম কোনো রুশ নারী টেনিস খেলোয়াড় বিশ্বে এক নম্বর হওয়ার সম্মান অর্জন করেন। পরের বছরই শারাপোভার নামের পাশে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ট্রফি। ২০১২ সালে ফরাসি ওপেন জেতার সঙ্গে দশম নারী হিসেবে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ীদের তালিকায় জায়গা করে নেন এই রুশ-সুন্দরী। এরপর অলিম্পিকেও পদক জেতেন তিনি। অতীতের এক নম্বর নারী টেনিস খেলোয়াড় মারিয়া শারাপোভা ফোর্বস পত্রিকার বিচারে টানা এগারো বছর ধরে বিশ্বের ধনীতম নারী অ্যাথল্যাটও ছিলেন।

২০১৬ সালের মার্চ অস্ট্রেলীয় ওপেনের ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ার খবর নিজেই প্রকাশ করেন শারাপোভা। তার রক্তে মেলডোনিয়াম নাম নিষিদ্ধ মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। হৃদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ওষুধটি নেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকায় চলে গিয়েছিল মেলডোনিয়াম। শারাপোভা জানিয়েছিলেন, শারীরিক সমস্যার জন্য সেই ২০০৬ সাল থেকে এই ওষুধ খাচ্ছেন তিনি এবং তিনি জানতেন না মেলডোনিয়াম নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু তার আবেদন অগ্রাহ্য করে তাকে প্রথমে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। পরে যা কমে ১৫ মাসে দাঁড়ায়।

এই নির্বাসনই মূলতঃ শারাপোভার ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়। এরপর আর কখনওই আগের ফর্মে ফিরতে পারেননি চোট আঘাতে এই তারকা। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে সেরেনার কাছে ১-৬, ১-৬ হারের পরেই তিনি বুঝে যান, আর নয়। এবার টেনিসকে বিদায় জানানোর সময় হয়েছে। কোর্টের বাইরে অগণিত অনুরাগীর হৃদয়ে ঝড় তোলা শারাপোভার জীবনেও এসেছেন একাধিক পুরুষ। ২০০৫ সালে গায়ক অ্যাডাম লেভাইনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। নিজের জন্মদিনের পার্টিতে লেভাইনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল শারাপোভার। কিন্তু সেই প্রেম বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

তিন বছর পরে টেলিভিশন প্রোডিউসার চার্লি এবেরসোলের অন্তরঙ্গ হন শারাপোভা। কিন্তু সেই সম্পর্কও ছিল স্বল্পস্থায়ী। ২০০৯ সাল থেকে মারিয়া শারাপোভা ডেট করছিলেন স্লোভেনিয়ান বাস্কেটবল খেলোয়াড় সাশা ভুজাকিকের সঙ্গে। দুই বছর পরে হয় এনগেজমেন্টও। কিন্তু ২০১২ সালে টেনিস সুন্দরী নিজেই জানান, তারা দুই জনে সরে এসেছেন সম্পর্ক থেকে। ২০১৩ সালে মাদ্রিদ ওপেনের সময় মারিয়া শারাপোভা জানান, বুলগেরিয়ার টেনিস খেলোয়াড় গ্রিগর দিমিত্রভের সঙ্গে তার প্রণয়ের সম্পর্ক আছে। কিন্তু দুই বছর পরে ভেঙে যায় সেই সম্পর্কও।

Development by: webnewsdesign.com