লাঠিতে ভর করে ডিগ্রিপড়ুয়া চৈতালির চাহিদা সেলাই মেশিন

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫:২৭ অপরাহ্ণ

লাঠিতে ভর করে ডিগ্রিপড়ুয়া চৈতালির চাহিদা সেলাই মেশিন

পানছড়ি সদর ইউপির মির্জিটিলা মধুমঙ্গলপাড়া গ্রামের মেয়ে চৈতালি চাকমা। জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। তাঁর বাম পায়ের হাটু থেকে নিচের অংশ একেবারে চিকন আর বাঁকানো। তাই হাঁটিহাঁটি পা পা অবস্থায় রপ্ত করে নেয় লাঠি ভর দিয়ে চলা। আর সেই লাঠির ওপর ভর করেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে এখন ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

সরেজমিনে বাড়িতে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, তার মা ইন্দ্রমুখী চাকমা ও প্রতিবন্ধী বাবা সুখ রঞ্জন চাকমা যথাক্রমে ২০১৪ ও ১৬ সালে মারা যায়। বাবার রেখে যাওয়া ঘরে একমাত্র বড় ভাই অমর কান্তি চাকমার সাথেই তার বসবাস। ঘর ভিটা ছাড়া বাবার আর কোনো জায়গা-জমি না থাকায় পরের জমি বর্গা চাষ আর দিন মজুরী করেই চলছে ভাইয়ের সংসার।

মিষ্টিভাষী চৈতালি জানায়, লাঠি ভর করেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে পানছড়ি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪-১৫ সালে ঢাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পাশ করেন। বর্তমানে তিনি পানছড়ি সরকারী ডিগ্রী কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখার পাশাপাশি উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের আওতাধীন সেলাই প্রশিক্ষন কোর্স প্রশিক্ষনরত। এরই মাঝে সেলাইয়ের কাজ রপ্ত হয়েছে।

নিজের সেলাই মেশিন থাকলে গ্রামের ছোট-খাট সেলাইকাজগুলো করে নিজ খরচের টাকাগুলো হয়ে যেত বলে জানান। বর্তমানে তিন মাস পর পর প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ ২২৫০ টাকাই তার একমাত্র সম্বল। তার বড় ভাই কষ্ট করে হলেও তার পড়ালেখা ও পোশাকের কিছু চাহিদা মিটায়। তাছাড়া কলেজ অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা তাকে লেখাপড়ার ব্যাপারে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে বলে জানায়।

প্রতিবেশী পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র চাকমা জানান, অত্যন্ত গরীব পরিবারের মেয়ে। পড়ালেখার প্রতি তাঁর খুব আগ্রহ। নতুন প্রজন্মের কাছে সে একটি দৃষ্টান্ত।

পানছড়ি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা জানান, মেয়েটি লাঠিতে ভর করে দীর্ঘ বছর রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কলেজে নিয়মিত আসা যাওয়া করে। তাকে কলেজের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিত্তবানরা তাকে দু’একটি মেশিন দিলে হয়তো ঘরে বসে তার খরচাদির টাকাগুলো নিজেই আয় করতে পারবে।

পানছড়ি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংঘের সভাপতি মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মেয়েটি এতিম তাছাড়া মেধাবী। তার প্রতি বিত্তবানরা একটু নজর দিলেই লেখাপড়ার পাশাপাশি সেলাই কাজ চালিয়ে যেতে আরো দ্বিগুণ আগ্রহ পাবে।

Development by: webnewsdesign.com