অভিনেতা রওনকের আবেগঘন স্ট্যাটাস

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৫:১৬ অপরাহ্ণ

অভিনেতা রওনকের আবেগঘন স্ট্যাটাস

জনপ্রিয় অভিনেতা রওনক হাসানের পিতা জয়নাল আবেদিন চিকিৎসাধীন অবস্হায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শনিবার সকাল ১১টায় কুমিল্লায় তার গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।পিতাকে হারিয়ে শোকগ্রস্ত রওনক হাসান শনিবার রাত ১১টায় তার ফেসবুক ওয়ালে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আর পারলাম না বাবাকে ধরে রাখতে!
বিগত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সন্ধ্যা ৭টায় পিতৃহীন হয়ে গেলাম… না আমি প্রকাশ্যে কাঁদতে পারিনি… যে দুএকবার লিফটে একা অথবা বাথরুমে সব কিছু ভেঙ্গে হুহু করে কান্না বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো ততোবারই আমি কী দারুণ ভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছি। যে ছেলে সংসারের দায়িত্ব নেয়. যে ছেলে যেকোনো ভাবেই হোক, হয়তো কারণ ছাড়াই সকলের নির্ভরতা হয়ে উঠতে শুরু করে.. যে ছেলের দিকে পরিবারের সবার প্রত্যাশা থাকে ভীষণ সেই ছেলেরা কাঁদতে পারে না। সেই ছেলেদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে নেই। এই ছেলেগুলোর কোনো অভিমান নেই.. কোনো অনুযোগ.রাগ..ক্ষোভ..কোনো কিছুই করবার অধিকার তারা রাখে না। তীব্র বানের মতো কতকথা তাদের বলতে ইচ্ছে হয় তারা বলতে পারে না। পাছে সেই বানে যদি প্রিয়জন সব ভেসে যায়!একটা সময় যে ছেলে ভীষণ উড়নচন্ডী! আবেগে উথালপাথাল….সেই ছেলে সময়ের আবর্তে কতো স্হির.. অবিচল….সদ্য পিতৃহীন ছেলের অন্তর্গত অনুভব কী হওয়া উচিত বুঝে উঠতে পারছি না। বেশকিছু দিন বাবা কিছুই করতেন না তবুও কী বিশাল ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি। আজ সেই বিশাল ছায়া প্রাণহীন হয়ে… তাকে নিজ হাতে গোসল করিয়ে.. সাড়ে তিন হাত ঠান্ডা মাটির ঘরে শুইয়ে দিয়ে এসে হতবিহবল এই আমি কী আকাশ কুসুম….অধিবাস্তব নাকি ভীষণ সত্য মুহূর্তে দাঁড়িয়ে….কী যে করা যায়…কী যে করা যেতে পারে অথবা শুধুই প্রার্থনা….আজ শেষ বিদায়ে .. সকলের উচ্চারিত কথামালা বারবার আমার শ্রবণে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে যেনো!সবাই বলেছেন একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন তিনি! আমি জানি… খুব কাছ থেকে দেখেছি.. ছোটোখাটো একজন মানুষ… ভালোবাসা… স্নেহ… মমতায়… উদারতায়, …সহনশীলতা… ক্ষমায় কতোটা বিশাল হয়ে উঠেছিলেন! মানুষ তাঁকে আঘাত দিয়ে তাঁর কাছে যখন আবার এসে দাঁড়িয়েছে তিনি বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। পুনরায় সেই একই মানুষ আঘাত দিয়ে আবারো যখন এসে দাঁড়িয়েছে, তখনো তিনি বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। তাঁরই সন্তান হয়ে এতোটা কখনো কি হতে পারা যাবে!!! যাবে না জানি!পারবো না জানি!! ঠান্ডায়… শ্বাসকষ্টে ভুগতে ভুগতে চলে গেলেন। সেই মানুষটি কী করে এখন ভীষণ শীতল মাটির ঘরে শুয়ে আছেন!!!! একা!!!!!! তাঁর দীর্ঘ জীবনের সঙ্গী আমার মা… তিনি আজ কেমন করে থাকছেন! তাঁর মনোজগতে কী অনুভব হচ্ছে!!! কাঁদছেন… বিলাপ করছেনৎ… তারও আরো গভীরে কী ক্ষরণ চলছে!!! ভয় হয়!!!আমি পারিনি কেনো ভীষণভাবে বাবাকে…পারি না কেনো ভীষণ ভাবে মাকে এই কলিজার ভেতর ভীষণ নিরাপদে আঁকড়ে রাখতে!!!!!কী লিখতে গিয়ে কতো কী লিখছি!! এলোমেলো সব!! এইতো আমার মনে এখন!আজকের আগে পর্যন্ত আমার প্রিয় মানুষদের অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে যখন হারিয়েছিলেন আমি অনেকের কাছে যাইনি… ফোন করিনি। ভাবতাম কী বলবো! কী বলে স্বান্তনা দেবো!!! আমি ভুল করেছিলাম। ভুল ভেবেছিলাম। আজ আমার এই মুহূর্তে আমার প্রিয়জন… বন্ধু..বড়ভাই.. আত্মীয়জন যখন ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন। ফোন করেছেন …টেক্সট করেছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে…কমেন্ট করে দোয়া করেছেন…সাহস দিয়েছেন এটা যে আমার জন্য কতবড় শক্তি হয়ে উঠেছে সেটা আমি এখন ভীষণভাবে উপলব্ধি করতে পারছি! আমি সকলের কাছে আজন্ম ঋণী হয়ে রইলাম।

আমি এতোদিন ভুল ভেবেছিলাম।কাছের মানুষের একটু স্পর্শ একটু কথা মানুষকে যেকোনো পরিস্থিতিতে স্হির থাকতে কী যে সহায়তা করে তা বলে বোঝানো যাবে না। কে যেনো বলেছিলো বা কোথাও পড়েছিলাম প্রতিটা মানুষ মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে জন্মায়! তাই চলে যাওয়া নিয়ে হাহুতাশ করার কোনো মানে হয় না! ১২ তারিখ নাটকের শুটিংয়ে নিজের মরবার অভিনয় করেছি। ১৩ তারিখ শুটিংয়ে বড়ভাই মারা গেছেন এমন দৃশ্যের অভিনয় করেছি আর ১৪ তারিখ জীবননাট্যে পিতার প্রয়াণ! !!!! অজিতেশ বন্দোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “অভিনেতা হচ্ছে মোমবাতি। জ্বলে জ্বলে ফুরিয়ে যাবে তবুও সে হাসবে, কারণ সে আলো দেয়”।আহ! আবার!!! কই থেকে কই চলে যাই!!!!সকলের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা…. আমি অবনত মস্তকে সকলের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, আমাকে ভীষণ এলোমেলো সময়ে সাহস দিয়ে স্হির, অবিচল রাখবার জন্য। সবার মঙ্গল হোক! সকলের জীবন সুন্দর হোক।’

Development by: webnewsdesign.com