সেই ধোপাদিঘীতে এবার বহুতল ভবন

বুধবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২০ | ২:২১ অপরাহ্ণ

সেই ধোপাদিঘীতে এবার বহুতল ভবন

সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধন ও দখলদারদের উচ্ছেদে ২০১৮ সালে উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সে সময় উচ্ছেদ করা হয় দিঘী দখল করে গড়ে ওঠা বেশকিছু স্থাপনা। চারদিকে স্থাপনার কারণে প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া ধোপাদিঘী এই অভিযানের ফলে কিছুটা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। যা প্রশংসা কুড়ায় নগরবাসীর।

তবে এবার উচ্ছেদ করা স্থাপনার জায়গায় নিজেরাই বহুতল ভবন নির্মাণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সোমবার ‘সিলেট সিটি করপোরেশন বহুতল বাণিজ্যিক ভবন, ধোপাদিঘির পাড়’ নামে নির্মিতব্য ওই ভবনের নকশাসহ একটি সাইনবোর্ড ধোপাদিঘীর পূর্বপাড়ে টানিয়েছে সিসিক। বহুতল এই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ফলে ফের ধোপাদিঘী ঢাকা পড়বে ও সৌন্দর্যহানি ঘটবে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ধোপাদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ২০১৮ সালে যখন দিঘীর মাঝখানে স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো তখনও আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। এরপর সিটি মেয়র আমাদের নকশা দেখিয়ে বলেছিলেন দিঘীর মাঝখানে কোনো স্থাপনা হবে না। এরপরে যখন দিঘীর আশপাশের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় আমরা তখন স্বাগত জানিয়েছিলাম। এরফলে লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়ে যাওয়া দিঘীটি আবার দৃশ্যমান হয়েছিলো।

কিম বলেন, এখন দেখতে পাচ্ছি সেই সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্পের কাজ থেমে আছে। অথচ দিঘীর পাড়ে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবন নির্মিত হলে দিঘীটি আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে ফেলে দেওয়া হবে। যা কখনোই কাম্য নয়। তিনি বলেন, নগর কর্তাদের বুঝতে হবে উন্নয়ন মানেই কেবল স্থাপনা নির্মাণ নয়। জলাশয়, খোলামেলা জায়গারও নগরীতে প্রয়োজন রয়েছে।
অসংখ্য দিঘীর কারণে একসময় দিঘীর শহর হিসেবে পরিচিতি ছিলো সিলেটের। তবে এসব দিঘীর বেশিরভাগই এখন দখলের পর ভরাট করে ফেলা হয়েছে। নগরীর অনেক এলাকার নামকরণও হয় সেইসব এলাকার দিঘীর নামে।
ধোপাদিঘীর পাড় এলাকার নামকরণও করা হয়েছিল এই দিঘির নামানুসারে। চারপাশে শিশু পার্ক, জেরখানা, মসজিদ, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনার কারণে এই দিঘী প্রায় আড়ালে পড়ে আছে। দিঘীর অনেক জায়গা দখলও হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ২০১৮ সিসিকের অভিযানে কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদের পর দিঘীটি একপাশ দিয়ে দৃশ্যমান হয়। তবে উচ্ছেদকৃত ওই এলাকায় এবার নিজেরাই ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিলে অস্তিত্ব সঙ্কটে ধোপাদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। এজন্য নকশা প্রণয়ন করা হয়। ওই সময় দিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কিছু কাজ করা হলেও মাঝপথে আটকে যায় ‘ধোপাদিঘী এরিয়া ফর ব্যটার ইনভাইরমেন্ট এন্ড বিউটিফিকেশন’ নামের ওই প্রকল্প। সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বহুতল ভবনের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, ধোপাদিঘির আকার অনেক বড় থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে আশপাশে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট গড়ে তোলে অনেকে এই দিঘীর জায়গাও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন। কেউ কেউ সিসিকের অনুমতি নিয়েছেন আবার অনেকে অনুমতি না নিয়েই দোকানপাট করছেন। দিঘীর পাড়ের সৌন্দর্য রক্ষার্থে ২০১৮ সালেই দিঘীর উত্তর-পূর্ব অংশে ১২তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে অত্যাধুনিক মার্কেট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সিসিক। যারা ধোপাদিঘীর পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। নতুন মার্কেটে তাদেরসহ অন্যদেরকে দোকান কোটা ভাড়া দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ধোপাদিঘী ও দিঘীর পাড় বেদখল ছিল। যে যার যার মত দোকানপাট গড়ে তোলেছিলেন। নগরীর মাঝখানে এমন একটি জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে দোকানপাট গড়ে তোলায় সে এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। তাই ২০১৮ সালে এখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এখনো শুধুমাত্র এই মার্কেটের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছ। কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগবে। ধোপাদিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হওয়ার পরই এই মার্কেটে কাজ ধরা হবে।

তিনি আরও বলেন, ধোপাদিঘির পাড়ে এতদিন ধরে যারা ব্যবসা করে আসছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। নতুন মার্কেটে তাদেরকেও দোকান কোটা ভাড়া দেওয়া হবে। এই মার্কেটটি তৈরি হলে কেউ আর বিচ্ছিন্ন ভাবে দোকানপাট বসাবেন না। এতে করে এই এলাকার সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা বাড়বে। পাশাপাশি ধোপাদিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের পর এই পুরো এলাকা অনেক দৃষ্টিনন্দন হবে।

 

Development by: webnewsdesign.com