ছাতকে কিশোর নির্যাতন

মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২০ | ২:৩৪ অপরাহ্ণ

ছাতকে কিশোর নির্যাতন

সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি চায়ের দোকান থেকে মোবাইল চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় বর্বর নিযার্তনের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। গ্রাম্য কবিরাজের কাছে তদবিরের কথা বলে কিশোরকে একটি সিএনজি গাড়িতে তুলে নিয়ে নির্জন একটি মাঠে হাত পা বেঁধে, কাপড় ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে পাশবিক নিযার্তন করা হয়। তার পর একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে কিশোরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রেখে যায় দুবর্ৃত্তরা। কিশোরের নাম শামীম আহমদ (১৭)। সে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ধারন বাজার সংলগন্ন সৈদেরগাঁও গ্রামের আবদুন নূরের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে ধারন বাজারের উত্তরে বেত বাগানে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কৈতক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী ও চিকিৎসা দেওয়া হয়।

স্থানীয় ও কিশোরের পরিবার সুত্রে জানা যায়, ৩-৪ বছর যাবৎ একই ইউনিয়নের পিরপুর গ্রামের জিল্লু মিয়ার মালিকানাধিন ধারন বাজারস্থ্য চায়ের দোকানে কাজ করে আসছিল শামীম। গত মঙ্গলবার ছোরাব আলী নামের একজনের একটি মোবাইল ওই চায়ের দোকান থেকে চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা জামানত নিয়ে গত শুক্রবার শালিস বৈঠকের তারিখ নিধার্রন করেন। কিন্ত ওই শালিস বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০ টার সময় গ্রাম্য কবিরাজের নিকট তদবির করার কথা বলে দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নির্দেশে কিশোরের পিতা আবদুর নুরের সামনে চায়ের দোকান থেকে কিশোর শামীমকে নিয়ে যান কতিপয় যুবক। ধারন বাজারের উত্তরে একটি বেত বাগানে নিয়ে কিশোর শামীমের হাত-পা বেঁধে পাশবিক বর্বর নিযার্তন করা হয়। তার দুটি পা ভেঙ্গে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। নির্মম নিযার্তনের শিকার হয়ে শামীম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এক পযার্য়ে তাকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে এসে ধারন বাজার সংলগ্ন একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে ফেলে রেখে যায় দুবর্ৃত্তরা। এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি বিশেষ মহল। ঘটনার প্রায় একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কিশোর শামীমের হতদরিদ্র দিনমজুর পিতা আবদুর নুর থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়া দিনমজুর আবদুর নুরের উপর প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে মরিয়া। কিশোর শামীম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকদিন যাবার পর বই-খাতা ফেলে দিয়ে নিতে হয় চায়ের দোকানে কাজ। কাজ করে যা বেতন পায় তা দিয়ে তার পিতাকে নানাভাবে সাহায্য করে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল সেই এটুকুন ছেলে। কিন্তু মধ্যযুগীয় নির্মমতা তার দুটি পা কেড়ে নিতে চলেছে। চোর অপবাদ দিয়ে বর্বর ঘাতকেরা হাত-পা বেঁধে, মাথা, নখ ও পিঠে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, পা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। নির্মম নিযার্তনের সময় শামীমের করুণ আর্তচিৎকার মন গলাতে পারেনি দুবর্ৃত্তদের। এমনকি এ পৈশাচিক নির্যাতনের সময় দুবর্ৃত্তরা ভিডিও চিত্রও ধারন করেছিল। নিযার্তন থেকে রেহাই পেতে এক পর্যায়ে স্বীকার করেছিল মোবাইল সে চুরি করেছে। কিন্ত এতেও রেহাই মেলেনি শামীমের। নির্মম নিযার্তনের শিকার হওয়ার পরও ভয়ে দুবর্ৃত্তদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ কিশোর শামীমের পরিবার।

এ বিষয়ে পাশবিক নিযার্তনের শিকার কিশোর শামীমের পিতা আবদুন নূর বলেন, আাম চায়ের দোকানের সামনে একটি সিএনজিতে বসা ছিলাম। আমার ছেলেকে মোল্লার বাড়ী (চাইল পড়া) খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই বলে একটি সিগারেট আমার হাতে দেওয়া হয়। তারা বলেন তুমি সিগারেট টানতে টানতে আমারা ফিরে আসবো। আমি সিগারেটে দুই টান দিয়েছি আর কিছু বলতে পারিনা। সিএনজিতে ঘুমিয়ে পড়ি। মনে হয় সিগারেটে নেশা ছিল। তিনি আরো বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। স্থানীয় গণ্যমান্য মুরব্বিয়ানরা চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়ার নিকট থেকে আগে ১০ হাজার টাকা ও এখন আরও ৫০ হাজার টাকা সিকিউরিটি নিয়েছেন। আজ ০৭/০১/২০২০ ইং (মঙ্গলবার) শালিস বৈঠক অনুষ্টিত হবে।
চায়ের দোকানের মালিক জিল্লু মিয়া শালিস বৈঠক ও সিকিউরিটি বাবৎ মোট ৬০ হাজার টাকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি যেভাবে বলা হচ্ছে এই ভাবে নয়।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, এ ঘটনায় কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Development by: webnewsdesign.com