মহাস্থানগড়ে আড়াই হাজার বছর পূর্বের নগরীর সন্ধান

রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২০ | ২:১২ অপরাহ্ণ

মহাস্থানগড়ে আড়াই হাজার বছর পূর্বের নগরীর সন্ধান

মহাস্থানগড়ে আড়াই হাজার বছর আগের বাণিজ্যিক নগরীর সন্ধান মিলেছে। সেখানে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয়াব্দ থেকে শুরু করে মুসলিম শাসনামলের স্মৃতি সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী পাওয়া গেছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী নিশ্চিত করেছে মহাস্থানগড় প্রাচীন যুগেও ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে ছিল সমৃদ্ধ।

প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান মহাস্থান গড়ে বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ উদ্যোগে খননকালে প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী ও এসব নিদর্শনের সন্ধান মেলে। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে খননকাজ শুরু হয়েছে মহাস্থানগড়ে।

মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন করা হয়েছে। খননের বিভিন্ন পর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খননকাজ পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খনন পরিচালনা করছে। এবারও গড়ের বৈরাগীর ভিটার ৫টি স্থানে শুরু হয় খননকাজ। এর মধ্যে ফ্রান্স দল ৩টি এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর দুটি স্থানে খননকাজ পরিচালনা করে।

এর আগে ২০১৭ সালে মহাস্থানে বৈরাগীর ভিটায় খননের পর প্রায় এক হাজার ৩’শ বছর আগে নির্মিত তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান পাওয়া যায়। এবার ওই স্থানের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে খনন করা হয়। খননকালে যেসব প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন মিলেছে, তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে বৈরাগী ভিটার এ জায়গাটি কোনো বাণিজ্যিক কেন্দ্র অথবা খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র ছিল। কারণ খননকালে পাশাপাশি ৫টি জায়গায় মোট ৮টি কূপের সন্ধান মিলেছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে বেশকিছু মৃৎ পাত্র, মাটির বিশালাকায় একটি ডাবর (মটকা) ও মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ।
খনন কাজে নিয়োজিত সদস্যরা ধারণা করছেন, জায়গাটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। খনন স্থলে প্রাপ্ত স্থাপত্য কাঠামো এবং উত্তরাঞ্চলীয় উজ্জ্বল চকচকে কালো মৃৎপাত্র (এনবিপিডাব্লিউ) দেখে খনন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এসব খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয়াব্দ অর্থাৎ মৌর্য আমলের। সেই হিসেবে খনন থেকে প্রাপ্ত ও উন্মোচিত প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরানো।

গত ৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া যৌথ খননে ফ্রান্সের পক্ষে কলিন লেফ্রাং’র নেতৃত্বে খনন কাজে ছিলেন এলবো ফ্রাংকোয়িস ও আতোয়ান। বাংলাদেশ দলের পক্ষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানার নেতৃত্বে প্রত্নত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান, শাহজাদপুর জাদুঘরের কস্টোডিয়ান মোহাম্মদ যায়েদ, মহাস্থান গড় জাদুঘরের কস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা, সিনিয়র ড্রাফসম্যান আফজাল হোসেন, আলোকচিত্রী আবুল কালাম আজাদ ও সার্ভেয়ার মুর্শিদ কামাল ভূঁইয়া ছিলেন।
খনন দলের অপর সদস্য মোহাম্মদ যায়েদ জানান, এবার যেসব কূপের সন্ধান মিলেছে তার মধ্যে একটি কূপ একেবারেই ব্যতিক্রম। ইতোপূর্বে যত খনন পরিচালিত হয়েছে সেসব খননে কোথাও ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপের সন্ধান মেলেনি। কিন্তু এবারই প্রথম তেমন একটি কূপের সন্ধান মিলেছে বৈরাগীর ভিটায়। এ কূপের প্রায় ৬ ফুট গভীর পর্যন্ত তারা এবার খনন করে ৪৬ সারি ইটের গাঁথুনি উন্মোচন করেছেন। এছাড়া অন্য ৭টি পাতকূয়া বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপটি সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দি অর্থাৎ পাল আমলের। অন্যান্য কূপও সমসাময়িক সময়ের। সেই হিসেবে প্রায় ১৩’শ বছর আগে এ অঞ্চলে ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপ থেকে মানুষ পানি সংগ্রহ করেছে।
এ প্রসঙ্গে মহাস্থান গড় জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা প্রতিবেদককে জানান, মহাস্থানগড়ের প্রাচীনত্ব বিশ্ব স্বীকৃত। সেই স্বীকৃতির নিদর্শনই প্রতি বছরের খননকাজে উন্মোচিত হচ্ছে। সেখানে যেসব প্রত্নতাত্ত্বি বস্তুর নমুনা মিলেছে তা প্রমাণ করে খ্রিষ্টের জন্মের পূর্বেও এ জনপদ ছিল সমৃদ্ধ।
তিনি আরও জানান, এবার খননে সেখানে পোড়ামাটির গুটিকা, মৃৎপাত্র, নকশা করা ইটসহ আরও অন্যান্য নিদর্শন মিলেছে। খনন কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই খননস্থলগুলো সংরক্ষণের জন্য মাটি ভরাট করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন।

Development by: webnewsdesign.com