কঠিন স্বপ্নকে জয় করলো মানিক-জিরা

বুধবার, ০১ জানুয়ারি ২০২০ | ২:২৯ অপরাহ্ণ

কঠিন স্বপ্নকে জয় করলো মানিক-জিরা

অদ’ম্য ইচ্ছাশক্তিতে এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পেয়েছে এ শিক্ষার্থী জিরা।দুই হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুন জিরা মুখে ভ’র দিয়ে লিখেই এবার পিইসি পরীক্ষা দিয়েছিলো। সে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। এবার উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। লিতুন জিরা পরনির্ভরশীল হয়ে সমাজের বো’ঝা হতে চায় না। লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয়ে আ’ত্মনির্ভরশীল হতে চায়।

লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান ও মা জাহানারা বেগম বলেন, লিতুন জিরা স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়া, গোছল সব কিছুই করতে পারে। মুখ দিয়েই লিখে সে। তার চমৎকার হাতের লেখায় মুগ্ধ হবে যে কেউ। লিতুন জানায়, তার একটাই ইচ্ছা, লেখাপড়া শিখে নিজেই কিছু করতে চায় সে। তবে, কিছুদিন আগে মা’রা যাওয়া দাদুর জন্য খুব মন খারাপ তার। দাদু বেঁ’চে থাকলে তিনি খুব খুশি হতেন।
লিতুন জিরার প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন বলেন, তার ২৯ বছর শিক্ষকতার জীবনে লিতুন জিরার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর দেখা পাননি। শুধু লেখাপড়ায় নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অন্যদের থেকে অনেক ভালো। তিনি বলেন, এই ফলাফলে আমরা সবাই খুশি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরীফী জানান, দুই হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুন জিরা মণিরামপুর উপজেলা থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিলো। সে ভালো রেজাল্ট করেছে।

এদিকে, জেএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে চমক সৃষ্টি করেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার জছিমিঞা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মানিক রহমান। সে পা দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এই সফলতা পেল। তার এই অর্জনে খুশি সহপাঠীসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মানিক রহমান জানায়, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহর রহমতে পা দিয়ে লিখে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চাই।


ছেলের এমন ফলাফলে খুশিতে কেঁদে ফেললেন মানিকের বাবা মিজানুর রহমান। তিনি বললেন, আমার দুটো সন্তান। ছোট সন্তান ক্লাস টুতে পড়ে। আমি দুই সন্তানকেই সমান চোখে দেখি। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে মানিকের মা ও আমি তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। এজন্য আমার স্ত্রী মরিয়ম বেগমের অবদানটাই বেশি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক এবারের জেএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। ওর জন্য আমরা গর্ব বোধ করি। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে এবং আল্লাহ যেন ওর স্বপ্নগুলো পূরণে সহায়তা করেন।

ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানিক অসাধারণ শিক্ষার্থী। সে আমাদের বিদ্যালয়ের সম্পদ। সে ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের ফাঁকে কলম ধরে লিখে, আর বাম পা দিয়ে প্রশ্ন ও খাতার পাতা উল্টাতে পারে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে সে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার ১৩৯ জন পরীক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। শতভাগ উত্তীর্ণ এ এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানিক রহমানসহ ৩২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com