পরিবর্তন আসছে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৫:৪১ অপরাহ্ণ

পরিবর্তন আসছে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে

প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এ পরিবর্তনের কাজ এখন চলছে। এতে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে ‘কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু’। একই সঙ্গে প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের ‘বোঝা কমাতে’ বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি বলছে, ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যক্রমের বই হাতে তুলে দেয়া হবে। এ সময়ে পাঠ্য বিষয়ও কমে যাবে। ধারাবাহিক মূল্যায়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেয়া হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বোঝাও কমবে।

এছাড়া প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা না রেখে ধারাবাহিক মূল্যায়নের লক্ষ্যেও কাজ চলছে। অন্যদিকে মাদরাসায় ধর্মীয় চারটি বিষয় যেমন, কুরআন, আকাইদ ও ফিকাহ, হাদিস এবং আরবির পাঠ্যক্রমেও পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করার কাজ চলছে। পাঠ্যসূচির যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক ছিল, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখছে কমিটি। ২০২১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত পাঠ্যবই আসবে। প্রাথমিকের শিশুদের বইয়ের সংখ্যাও কমিয়ে দেয়া হবে।’

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘২০২১ সালে প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণি, ২০২২ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম ও নবম, ২০২৩ সালে পঞ্চম ও অষ্টম, ২০২৪ সালে একাদশ এবং ২০২৫ সালে দ্বাদশ শ্রেণির পরিবর্তিত পাঠ্যক্রমের বই পাবে শিক্ষার্থীরা। নতুন পাঠ্যক্রমে কনটেন্ট পড়ার চাপ কমিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নে গুরুত্ব দেয়া হবে। পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমিয়ে আনা হবে।’
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক স্তর থেকে বিভাগ তুলে দেয়া হবে। নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ এসব বিভাজন আর থাকছে না। নবম ও দশম শ্রেণিতে সবাইকে একই শিক্ষাক্রমে একই পাঠ্যবই পড়তে হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে।

প্রসঙ্গতঃ মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে সর্বশেষ পরিবর্তন আনা হয় ২০১৩ সালের শিক্ষাবর্ষে। পাঁচ বছর পর পর পরিবর্তন আনার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে পরিবর্তন আসছে আট বছর পর। আর প্রাথমিকে সর্বশেষ শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছিল ২০১১ শিক্ষাবর্ষে। ১০ বছর পর এবার ফের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই প্রথম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম একসঙ্গে পরিবর্তন ও সমন্বয় করা হচ্ছে। আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে কোনো সমন্বয় করা হতো না। এছাড়া, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার বিষয়েও কাজ চলছে।

বর্তমানে প্রথম শ্রেণির আগে সরকারি স্কুলে একটি শ্রেণি আছে। আগামী দিনগুলোতে প্রথম শ্রেণির আগে সরকারি স্কুলেও দুটি শ্রেণিতে পড়তে হবে শিশুদের। আর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রেখে ধারাবাহিক মূল্যায়নের লক্ষ্যেও কাজ চলছে। সূত্রমতে, শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কাজ হবে কয়েকটি ধাপে। প্রথম ধাপে শিক্ষাক্রমের ত্রুটি, বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে বিশেষজ্ঞরা কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা খুঁজে বের করবেন। এরপর একাধিক কর্মশালা ও গবেষণা শেষে নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি করা হবে। আগামী বছরের (২০২০) মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই শিক্ষাক্রমে পরিমার্জনের কাজ চূড়ান্ত করা হবে।
বর্তমানে এনসিটিবির পাঠ্যক্রম অনুযায়ী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনটি করে পাঠ্যবই এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি করে পাঠ্যবই পড়তে হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। নবম ও দশম শ্রেণিতে ২৭টি এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩৯টি পাঠ্যবই আছে। তবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ আলাদা থাকায় নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণিতে সব শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ের বই পড়তে হয় না।

মাদরাসায় ধর্মীয় চারটি বিষয় যেমন, কুরআন, আকাইদ ও ফিকাহ, হাদিস এবং আরবির পাঠ্যক্রমেও পরিবর্তন আসছে।
প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘প্রাথমিকের ১০টি লার্নিং এরিয়া ঠিক রেখে কিছু বিষয় একত্রিত করে পাঠ্যবই কমিয়ে দেয়া হবে।’ ‘উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নৈতিক শিক্ষা ও ধর্ম, শারীরিক শিক্ষা ও চারুকলা এরকম একই বিষয়গুলোকে একত্রিত করে বই কমিয়ে দেয়া হবে।’

কয়টি করে বই রাখা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি কমিটি চূড়ান্ত করার পর জানা যাবে। তবে বই কমিয়ে দেয়া হবে। শিশুদের কাছে বই যেন বোঝা না হয়, পাঠে যেন তারা আনন্দ পায়, সেদিকে গুরুত্ব দিয়েই পরিমার্জনের কাজ চলছে।’
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, ‘বই কমানোর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে কনটেন্ট কমিয়ে দেয়া। একটি বইয়ে অনেক কনটেন্ট থাকতে পারে। সমস্যা কনটেন্ট লোড নিয়ে। যে কনটেন্ট রয়েছে সেটা যে ওভারলোডেড, তা নয়। কনটেন্টের যে বিষয়গুলো যে শ্রেণিতে শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেই বিষয়গুলো মুখস্থ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। সে কারণে ওভারলোডেড হয়ে যায়। আমরা সেগুলো মিনিমাইস করার চেষ্টা করব। এখনো যে কনটেন্ট পড়ানো হয়, সেগুলো যে বেশি তা নয়, তবে কন্ট্রাক্ট আওয়ারসহ এখনো সিক্রোনাইজ করা আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যখন যে প্রশ্নের দরকার নেই, সেই প্রশ্ন যদি করেন, তাহলে পুরো বইটি শিশুকে পড়তে হচ্ছে। অথচ ওই সময়ে তাকে বিষয়টি না জানালেও চলে, কিন্তু তাকে বাধ্য হয়ে পুরোটা পড়তে হচ্ছে। এই জায়গায় শিশুরা সাফার করছে।’

অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান আরো বলেন, ‘আমরা চাইবো ধারাবাহিক মূল্যায়নে নিয়ে যেতে। পরীক্ষার লোড কমিয়ে আনতে। যাতে শিশুর অ্যাক্টিভিটিজ বেশি থাকে, কনটেন্টে মনোযোগ কম থাকে। এখন যে প্রেসারটা দেয়া হয়, সেটা কমাতে চেষ্টা করা হচ্ছে।’ পরীক্ষায় লোড কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেটা ১০০ নম্বরের পরীক্ষা, সেটা চলে যাবে ৫০ নম্বরে। বাকিটা চলে যাবে ধারাবাহিক মূল্যায়নে। পরীক্ষা এখন যে সময় নিয়ে হয়, সেটাও কমে যাবে। প্রথম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই এই পরিবর্তন আনা হবে।’

Development by: webnewsdesign.com