এ বছর স্মৃতি পৃষ্ঠায় নিবন্ধিত হলেন যারা

বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

এ বছর স্মৃতি পৃষ্ঠায় নিবন্ধিত হলেন যারা

মিডিয়া ডেস্ক
যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবদানের ফল আজকে আমাদের এই সাংস্কৃতিক অঙ্গন। তাদের অনেকেই এ বছর চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। নিয়তির এক অমোঘ নিয়মে তারা পাড়ি জমিয়েছেন না-ফেরার দেশে। মৃত্যুজনিত শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তবুও চিরাচরিত এ নিয়মে ২০১৯ সালে আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের স্মরণে এই প্রতিবেদন।

খালিদ হোসেন : বরেণ্য নজরুলসংগীত শিল্পী খালিদ হোসেন গত ২২ মে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। খালিদ হোসেনের গাওয়া নজরুলসংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। আরো পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল : মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গত ২২ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সংগীতশিল্পে সক্রিয় ছিলেন এই তারকা।

শাহনাজ রহমতউল্লাহ : কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ। গত ২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সংগীতজীবনে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে, এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু সম্মানায় ভূষিত হয়েছেন।

টেলি সামাদ : বরেণ্য কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ। গত ৬ এপ্রিল স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সত্তর ও আশির দশকের শক্তিমান এ অভিনেতার প্রকৃত নাম আবদুস সামাদ। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনি সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। চমৎকার প্রতিভার অধিকারী হওয়ায় তাকে ‘টেলি’ উপাধি দেওয়া হয়। শুধু অভিনয় নয়, গান ও ছবি আঁকাতেও ছিল তার সমান পারদর্শিতা।

মাহফুজুর রহমান : দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান। গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তাঁর অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্পচূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন।

আজিজ : জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আজিজ। চলচ্চিত্রে ‘কালা আজিজ’ নামে পরিচিত ছিলেন গুণী এই শিল্পী। গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

কালিদাস কর্মকার : বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। গত ১৮ অক্টোবর ইস্কাটনের বাসায় অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সালেহ আহমেদ : টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা সালেহ আহমেদ। গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন এই অভিনেতা। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ১৯৯১ সালে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। ধারাবাহিক ‘অয়োময়’ নাটক এবং ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে তার পদচারণা শুরু। এই অভিনেতা পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক।

আনিস : স্বনামধন্য কৌতুক অভিনেতা আনিসুর রহমান আনিস। গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীর টিকাটুলীর অভয় দাস লেনের বাসায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আনিস চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন অভিনেতা নয়, চিত্রসম্পাদক হিসেবে।

সুবীর নন্দী : বর্ণাঢ্য সংগীত ক্যারিয়ারে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী। গত ৭ মে মারা যান দেশবরেণ্য এই শিল্পী। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমআইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৬৬ বছর বয়সী সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। তার হার্টে বাইপাস অপারেশন করা হয়েছিল। কিডনিতেও সমস্যা ছিল। দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

মায়া ঘোষ : গত ১৯ মে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। ২০০০ সালে মায়া ঘোষের ক্যানসার ধরা পড়ে। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যানসার হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা চলে। ২০০৯ সালের দিকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর কিডনি, লিভার ও হাঁটুর সমস্যা দেখা দেয়।

মমতাজউদ্দীন আহমেদ : প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজ উদ্দীন আহমদ। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। চলতি বছরের ২ জুন না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

বাবর : চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক বাবর মারা যান ৬ আগস্ট। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। ‘বাংলার মুখ’, ‘রংবাজ’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অবশ্য মাঝে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।

ইফতেখারুল আলম: ষাটের দশকের সিনেমার প্রখ্যাত প্রযোজক ইফতেখারুল আলম ৫ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

নাজমুল হুদা মিন্টু : চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজমুল হুদা মিন্টু গত ২ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘সূর্য ওঠার আগে’, ‘চৌধুরী বাড়ী’, ‘ডাক পিয়ন’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘দিনের পর দিন’, ‘সংঘর্ষ’, ‘মধুমালতি’, ‘ঘরে বাইরে’সহ বেশ কিছু সিনেমা নির্মাণ করেন।

আহমেদ কায়সার : ‘পাগল মন’ গানের গীতিকার আহমেদ কায়সার গত ১ এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার চরখালী গ্রামে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

হুমায়ূন সাধু : তরুণ নাট নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷

পৃথ্বী রাজ : তরুণ শিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক পৃথ্বী রাজ। গত ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও জিলাপিতে কাজ করার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

মোহাম্মদ জাকির খাঁন : নির্মাতা মোহাম্মদ জাকির খাঁন। রাজধানীর উত্তরায় আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে গত ১৮ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তিনি স্ত্রী, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

হাসিবুল ইসলাম মিজান : ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন হাসিবুল ইসলাম মিজান। তার পরিচালিত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘প্রেমের কসম’ ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ ‘জন্ম’ ‘কপাল’ ও ‘তুমি আছো হৃদয়ে’।

সূচনা : অকালে চলে গেলেন মডেল, অভিনেত্রী সূচনা ডলি। কিডনি সমস্যার কারণে শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তমা : মঞ্চ ও ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী তমা খান। গত ৮ মে রাজধানীর মিরপুরে তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মিরপুরের ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়।

Development by: webnewsdesign.com