ওলামা লীগকে স্বীকৃতি দিতে পারে আ.লীগ

সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ওলামা লীগকে স্বীকৃতি দিতে পারে আ.লীগ

রাজনৈতিক প্রতিবেদক
ওলামা লীগকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে মতাসীন আওয়ামী লীগ। সংগঠনটির বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মসূচির কারণে বারবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করলেও এবার ওলামা লীগের সব পকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওলামা লীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হতে পারে। ওলামা লীগের একাধিক গ্রুপের দায়িত্বশীল পদধারীরা এ প্রতিবেদককে এ তথ্য জানান।
সূত্র জানায়, গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ওলামা লীগের সব পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ড. গোলাপ ওলামা লীগের বিভিন্ন পরে নেতাদের বক্তব্য শোনার পর তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওলামা লীগের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সম্মেলন করার জন্য সহযোগিতা চেয়ে আসছিল। সংগঠনটির নেতারা বারবার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালনকারী, গণতন্ত্রকামী ও প্রগতিশীল বলে দাবি করছেন। তারা বলেছেন, যারা উগ্রপন্থী ও সাম্প্রদায়িক ছিলেন, তারা এখন আর ওলামা লীগ করেন না। এরই পরিপ্রেেিত তাদের সব গ্রুপের সবাইকে নিয়ে বসেছিলাম। তাদের বক্তব্য শুনেছি। এখন সেটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দেন, তাহলে ওলামা লীগকে সম্মেলনের জন্য সহযোগিতা করা যেতে পারে।’
প্রসঙ্গত, বহু গ্রুপে বিভক্ত ওলামা লীগের বিএনপি-জামায়াতবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিভিন্ন সময় সংগঠনটির নেতারা বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন। সর্বশেষ এই বছরের ২১ জানুয়ারি বিপিএল নিষিদ্ধ করা, সংখ্যালঘু আইন না করা ও দেশের সব এনজিও বন্ধসহ ১৩ দফা দাবি করে জাতীয় প্রেসকাবের সামনে মানববন্ধন করে ওলামা লীগ। ওইদিনই আওয়ামী লীগের প থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়। এর আগেও মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণের বিরোধিতা, শিা আইন বাতিল, ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়নের দাবি করায় ওলামা লীগ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ওলামা লীগের একটি অংশ পহেলা বৈশাখ পালনকে অপসংস্কৃতি দাবি করে এই দিবসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিল।
শনিবারের (৭ ডিসেম্বর) বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ওলামা লীগের একটি অংশের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসান শরিয়তপুরী বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ হলে ওলামা লীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
বর্তমানে বড় আকারে ওলামা লীগের দু’টি গ্রুপ সক্রিয়। এর একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন মাওলানা আখতার হোসাইন বোখারী ও মাওলানা আবুল হাসান শরিয়তপুরী। আরেক অংশের নেতৃত্বে আছেন মাওলানা আহাদ আলী সরকার ও মুফতি আব্দুস সাত্তার। এর বাইরেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন অংশ থাকলেও সেগুলো সাংগঠনিক আকারে নেই। একটি অংশের একসময়ের সভাপতি মাওলানা ইলিয়াস হোসেন বিন হেলালী মৃত্যুবরণ করায় তার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। আর একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা ইসমাইল হোসেন। তিনি ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক লীগ নামে নতুন একটি দল তৈরি করেছেন।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে অস্বীকার করলেও ১৯৬৯ সাল থেকেই আওয়ামী ওলামা পার্টি নামে একটি সংগঠন আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। মূলত ছয় দফাকে কেন্দ্র করে এ সংগঠনটির জন্ম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি আলেমরাও এর বিরোধিতা করেন। তারা ওই আন্দোলনকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দেন। তখন বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) অংশে ছয় দফাকে সমর্থন করেন মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বিন সায়ীদ জালালাবাদী (জালালাবাদী হুজুর)। ছয় দফার পে জনমত গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু তাকে সমমনাদের নিয়ে কাজ করতে বলেন। এরপর মাওলানা ওলিউর রহমান, মাওলানা বেলায়েত হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে ‘শরিয়তের দৃষ্টিতে ছয় দফা’ নামে প্রচারণায় নামেন তারা। তারা বলেন, ছয় দফা ইসলাম পরিপন্থী নয় বরং ইসলামের পরিপূরক। এরপর ১৯৬৯ সালে তারা আওয়ামী ওলামা পার্টি গঠন করেন।

Development by: webnewsdesign.com